বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাগডোগরা বিমানবন্দরে মানুষ আর গাড়িতে ছয়লাপ। সকাল ১০টায় বিমান থেকে নামার সময় ছিল দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অমর সিং রাইয়ের। কিন্তু তার আগে থেকেই শতাধিক গাড়ি হাজির পাহাড় থেকে। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পা রেখেই পাহাড়বাসীর উদ্দেশ্যে অমর সিং রাই বার্তা দিলেন, বিভেদ নয়, বিভাজন নয়। বরং গোর্খাদের আত্মপরিচয় ও সুরক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বৃহস্পতিবার যখন বাগডোগরায় পা রাখেন রাই, তখন পাহাড়বাসীর মুখে একদিকে যেমন ‘জয় গোর্খা’ স্লোগান শোনা যাচ্ছিল, সেই সঙ্গে শোনা যাচ্ছিল ‘মা-মাটি-মানুষ’ স্লোগানও। মোর্চার পতাকা আর তৃণমূলের পতাকা আলাদা করা যাচ্ছিল না। পাহাড়-সমতলের মানুষও এক হয়ে গিয়েছিলেন। আসলে রাইকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে হাজার হাজার কর্মী নেমে এসেছিলেন পাহাড় থেকে। বাদ যাননি সমতলের নেতা-কর্মীরাও। এই সম্প্রীতির ছবিটাই যেন দেখতে চেয়েছিলেনন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব থেকে শুরু করে শিলিগুড়ি পুরনিগমের বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকার, সকলেই হাজির ছিলেন দলীয় প্রার্থীকে স্বাগত জানাতে। শয়ে শয়ে খাদা (উত্তরীয়) আর পুষ্পস্তবক গ্রহণের ফাঁকে তৃণমূল প্রার্থী জানিয়ে দিলেন, ‘আমরা গোর্খাদের আইডেন্টিটির জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। পাহাড়ে গিয়ে দ্রুত বৈঠক করে বাকি অ্যাজেন্ডাও ঠিক করব।’ অমর সিং রাইয়ের এমন বক্তব্য শুনে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বিমানবন্দর চত্বর।
এরপর সেখান থেকে দার্জিলিং মোড় পর্যন্ত হুডখোলা জিপে বিশাল মিছিল বের করা হয়। প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব ও জিটিএ-র প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাং। দার্জিলিং মোড়ে মিছিল শেষ করে পাহাড়ের পথে রওনা হন। সেখানেও অন্তত ১৫০-২০০ গাড়ি ছিল। গাড়ি রোহিণী, কার্শিয়াং, ঘুম যে পথ দিয়েই দার্জিলিং গেছে, সেখানেই হাজার হাজার মানুষ স্বাগত জানিয়েছেন। নানান বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে উৎসব করে রাইকে স্বাগত জানিয়েছেন পাহাড়বাসী।
এমন অভ্যর্থনা পেয়ে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল প্রার্থীও। তিনি জানান, ‘মানুষের উন্মাদনা বলে দিচ্ছে আমরা জিতছি।’ র্যালিতে হাজির থাকা রঞ্জন সরকার, বিকাশ সরকার, মদন ভট্টাচার্যরাও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানান, পাহাড়ে এবারে তৃণমূলের সাংসদ হবে। এত মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাস দেখে বিনয় তামাংও জানিয়ে দেন, এবারের লোকসভা নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী ২ লক্ষ ভোটে জিতে আসবেন।
তৃণমূলের তরফ থেকে মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, ‘অনেক ভাবনাচিন্তা করে দল প্রার্থী নির্বাচন করেছে। এমন বিচক্ষণ, শিক্ষিত, নম্র মানুষ কম পাওয়া যায়। তিনি দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন। এখন বিধায়ক আছেন। তাঁকে নির্বাচন করা যে যথার্থ হয়েছে সেটা হাজার হাজার মানুষের উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছে।’