মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম হল ‘বাসস্থান’-এর অধিকার। তাই সকলের মাথার ওপরে ছাদ থাকুক, এটাই চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই লক্ষ্যপূরণের উদ্দেশ্যেই সকলের জন্য ‘নিজশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছিলেন মমতা। আর এবার ঠিকা জমিতে বাড়ি তৈরির পথ সুগম করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ মমতা সরকারের। রাজ্যের আর পাঁচটা এলাকার মতোই ঠিকা জমির ওপর গড়ে উঠবে বহুতল। তার জন্য পুরসভা থেকে মিলবে বাড়ি নির্মাণের ছাড়পত্র।
প্রসঙ্গত, এতদিন পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত ঠিকা জমির ওপর বাড়ি বানানো যেত। কড়া নিয়মের বেড়াজালে থমকে যাচ্ছিল ঠিকা জমির ওপর বাড়ি তৈরির উদ্যোগ। সেই বিধিনিষেধ উঠিয়ে পুরসভার বিল্ডিং রুল মেনে যাতে ঠিকা প্রজারা নিজেদের প্রয়োজনমাফিক বাড়ি বানাতে পারেন, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে ঠিকা আইন সংশোধন করতে চলেছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গতকালই কলোনির জমিতে উন্নয়নের রোড ম্যাপ তৈরি করতে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠীও তৈরি করা হয়েছে।
সরকারি হিসাব অনুসারে, কলকাতা, হাওড়া ও আসানসোল মিলিয়ে সারা রাজ্যে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ ঠিকা জমিতে বংশ পরম্পরায় বসবাস করেন। তাঁদেরকে বলা হয় ঠিকা প্রজা। তাঁদের অধীনে অনেক ভাড়াটিয়াও রয়েছে। পুরোনো জমিদাররা তাঁদের অধিকৃত জমিতে ভাড়াটিয়া হিসাবে কিছু মানুষকে বসবাস করতে দিয়েছিলেন। সেই জমিগুলিই হল ঠিকা জমি। কলকাতা শহরে প্রায় দু’হাজার একর ঠিকা জমি রয়েছে। হাওড়া পুর এলাকাতেও প্রায় ৫১৭ একর ঠিকা জমি রয়েছে।
জমিদারি উঠে যাওয়ার পর সেই সব ভাড়াটিয়াকে রাজ্য সরকার ঠিকা টেনান্ট হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। একই সঙ্গে বাড়িতে ভাড়াটিয়া বসানোর অধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু জমির মালিকানা না-থাকায় তাঁরা বাড়ি বানাতে গিয়ে আর জল-বিদ্যুতের কানেকশন নিতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। তার সুরাহার জন্য কয়েক বছর আগে ঠিকা আইন সংশোধন করে পাকা বাড়ির তৈরির অধিকার দেওয়া হয় তাঁদের। কিন্তু তার সঙ্গে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, ঠিকা জমিতে ৯.৫ মিটার পর্যন্ত উচ্চতার বাড়ি বানানো যাবে। তাতে খুব বেশি হলে তিনতলা বাড়ি বানানো যায়। এর ফলে ঠিকা জমিতে কোনও বহুতল বানানো সম্ভব হচ্ছিল না।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, ঠিকা জমির বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই বস্তিবাসী। ফলে সেখানকার জনসংখ্যাও অনেক বেশি। তাঁদের অনেকেই ছোট ঝুপড়িতে বসবাস করেন। গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর, তপসিয়া, তিলজলা এবং হাওড়ার বেলিলিয়াস রোডে এরকম অনেক ঠিকা জমি রয়েছে, যেখানে বড় বড় বস্তি রয়েছে। আইন সংশোধন হলে তাঁরা নিজেরাই ঠিকা জমির উপর পুরসভার এফএআর অনুযায়ী বহুতল বাড়ি বানাতে পারবেন। তাতে একসঙ্গে অনেক মানুষ বসবাস করতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, পুরসভা থেকে তাঁদের নামে মিউটেশন করে দেওয়া হবে। ফলে তাঁরা ঋণ নিয়ে বাড়ি করতে পারবেন। সেরকম হলে রাজ্য সরকার বাংলার বাড়ি আবাসন প্রকল্পে তাঁদের জন্য বাড়ি বানিয়ে দেবে। ৩৮৫ বর্গ ফুটের জি প্লাস ৪ বাড়ি বানানো হবে। মন্ত্রীর দাবি, ঠিকা জমিতে কোনও ভাবেই প্রোমোটিং করতে দেওয়া হবে না। বাড়ি তৈরির পর ফাঁকা জমিতে সবুজায়ন করা হবে এবং ছোটদের জন্য পার্ক তৈরি করে দেওয়া হবে। নবান্নের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘শহরের গরিব ও মধ্যবিত্তের স্বার্থরক্ষায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের যে অংশ দীর্ঘদিন কলকাতা ও হাওড়ার বাসিন্দা তাঁরা যাতে এই শহরেই একটু স্বচ্ছন্দে দিনযাপন করতে পারেন সেই জন্যই এই সিদ্ধান্ত।’