চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক অভাবনীয় সাফল্য। যথাযত চিকিৎসার পর এক এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভাইরাস মুক্ত ঘোষণা করা হল। দ্বিতীয়বার এই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল। ২০০৩ সালে এইচআইভি-পজিটিভ ভাইরাস ধরা পড়েছিল এক ব্যক্তির শরীরে। ৯ বছর পর জানা যায় তিনি ক্যান্সারেও আক্রান্ত। বাঁচার আশা তো দূর অস্ত, মৃত্যু কতটা যন্ত্রণাদায়ক হতে চলেছে, সেটা ভেবেই বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি। সেই তিনিই এখন এইচআইভি-মুক্ত। গত ১৮ মাসে তাঁর শরীরে কোনও ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও অটুট রয়েছে। কোনও ওষুধ নয়, এর মূলে রয়েছে বিশেষ এক চিকিৎসা পদ্ধতি। এটাই তাঁকে বাঁচানোর শেষ পথ ছিল। এইডসে আক্রান্ত নন, এমন এক ব্যক্তির বোন ম্যারো থেকে স্টেম সেল নিয়ে তা দেওয়া হয়েছে আক্রান্ত ব্যক্তিকে।
২০১৬ সালে আক্রান্তের অবস্থার অবনতি শুরু হলে তখন এই প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা হয়। যে ব্যক্তির শরীর থেকে কোষ নেওয়া হয়েছে, জিনগত কারণেই এইডস প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে এমন এক ব্যক্তির শরীর থেকে কোষ নেওয়া হয়েছে। বছর তিনেক আগে লন্ডনের একটি হাসপাতালে এই প্রতিস্থাপন হয়। চিকিৎসক দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত এইচআইভি বায়োলজিস্ট রবীন্দ্র গুপ্তা। তিনি জানিয়েছেন, “বর্তমানে ওই রোগীর শরীরে কোনও ভাইরাসের অস্তিত্ব নেই”।
গবেষকরা এই বিষয়ে উচ্ছ্বসিত হলেও তাঁদের মতে এটি এইডসের চিকিৎসার কোনও স্বাভাবিক পদ্ধতি হতে পারে না। কারণ এ ভাবে বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন অত্যন্ত জটিল, সময়সাপেক্ষ এবং খরচবহুল। তবে এই পদ্ধতি আগামী দিনে এইচআইভি-গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে চলেছে।
২০০৭ সালে একই ভাবে বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ভাইরাসমুক্ত করা গিয়েছিল মার্কিন নাগরিক টিমোথি ব্রাউনকে। জার্মানিতে তাঁর চিকিৎসা হয়েছিল বলে তিনি ‘দ্য জার্মান পেশেন্ট’ নামে পরিচিত। চিকিৎসার পর নিজের দেশে ফিরে গিয়েছেন টিমোথি। জার্মান পেশেন্টের পর এ বার লন্ডন পেশেন্টের সাফল্যতা। আটের দশক থেকে পৃথিবীতে এইচআইভি পজিটিভ ভাইরাসের প্রকোপ নজরে এসেছে। তার পর থেকে সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসের বলি হয়েছেন। এখনও এর কোনও সঠিক ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেননি গবেষকরা।




