মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ‘সবুজ সাথী’র সৌজন্যে বদলে গেছে জঙ্গলমহলের জীবনযাত্রা। একটা সাইকেল বদলে দিয়েছে জঙ্গলমহলের পড়ুয়াদের রোজকার জীবন। ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামের পড়ুয়ারা পায়ে হেঁটে স্কুল যেত, প্রাইভেট টিউশন বা হাটবাজার পা-ই ছিল তাঁদের প্রধান ভরসা। ৭-৮ কিলোমিটার হাঁটাপথ এখন ‘সবুজ সাথী’র দৌলতে অনেক সহজ।
লালগড় সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ের শারীরশিক্ষা বিভাগের শিক্ষিকা রাখী সিংহ জানান, “সাইকেল করে স্কুলে যাতায়াতের ফলে পড়ুয়াদের শরীরচর্চা হচ্ছে৷ কারণ সাইকেল চালানোর মধ্য দিয়ে বেশিরভাগ ব্যায়াম একসঙ্গে করা যায়৷ জঙ্গলপথে পড়ুয়াদের সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে ওই এক সাইকেল”। ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম ব্লকের অনেক গ্রামই জঙ্গলে ঘেরা। পরিবহণ ব্যবস্থার জন্য সেখানে কোনো যানবাহন নেই। বাড়ি থেকে স্কুলে পৌঁছানো খুব সহজ নয় কারণ অনেকটাই দূর। এ বছর পাতিনা এসসি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে ওই গ্রামের সীতা মুর্মু। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার৷ আবার ওই রাস্তায় হাতি, হায়নার মতো বন্যপ্রাণীদের আনাগোনা। সীতা বলে, “গত বছর নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় সাইকেলটি পেয়েছি৷ এটা সঙ্গে থাকলে মনে একটা সাহস থাকে৷ জঙ্গলের রাস্তায় আর ভয় লাগে না”।
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রকল্প বিশ্বের ৫টি প্রকল্পের মধ্যে একটি। এর ফলে শুধু পড়ুয়ারা নয়, প্রতি পরিবারের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হয়ে গেছে। সুবিধা হয়েছে সকলেরই। নয়াগ্রামের বিহানকুড়িয়ায় বাড়ি পানগো মুর্মুর৷ এ বছর মাধ্যমিক দিয়েছে সে৷ পানগো বলে, “জঙ্গল লাগোয়া আমাদের বাড়ি থেকে স্কুল, টিউশন, বাজার, বাসস্ট্যাণ্ড সবকিছুই প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার দূরে৷ সাইকেল ছাড়া যাওয়া যায় না৷ গত বছর সাইকেলটি পাওয়ায় খুব সুবিধা হয়েছে”।
জামবনি ব্লকের চুটিয়া গ্রামের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া মলয় সিংহ তাঁর দিদি এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে, দিদির সবুজ সাথী সাইকেলে করে ভাই যাচ্ছে স্কুলে। সে বলে, ”দিদি পরীক্ষা দিয়েছে৷ এখন বাড়িতে বসে। তাই দিদির সাইকেল নিয়ে আমি স্কুলে যাচ্ছি”। গ্রামের আরেক বাসিন্দা বিদ্যুৎ পাল বলেন, ‘এখন তো নতুন সাইকেল কিনতে গেলে প্রায় ৪-৫ হাজার টাকারা ধাক্কা। মমতাদি সাইকেল দেওয়ায় আর কিনতে হয়নি৷ খুব উপকার হয়েছে”।