গোটা দেশেই যখন যুদ্ধের আবহ। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে পাকিস্তানকে ‘পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া’র দাবী উঠছে, তখন পুলওয়ামায় শহীদ বাংলার বীর সন্তান বাবলু সাঁতরার স্ত্রী মিতা সাঁতরা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ‘একজন শিক্ষিকা ও একজন ইতিহাসের ছাত্রী হিসাবে জানি যুদ্ধ কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। যুদ্ধে একজন স্ত্রী স্বামীকে হারান, একজন মা সন্তানকে, একজন শিশু বাবাকে হারায়। তাই সার্বিকভাবে যুদ্ধ করে কী লাভ?’ আর এবার তাঁর পথেই হাঁটলেন আরেক শহীদ জওয়ানের স্ত্রী৷ তাঁর গলায়ও শোনা গেল মিতার মতো যুদ্ধবিরোধী সুর।
‘আমরা যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধের ক্ষতি কী সেটা আপনারা জানেন না। সোশ্যাল মিডিয়ার যোদ্ধারা এবার থামুন। এখনও যদি আপনারা যুদ্ধ চান তা হলে সীমান্তে যান।’ – এমনই মন্তব্য করলেন শহীদ সেনা নিনাদ মান্ডবগণের স্ত্রী বিজেতা। সীমান্ত সমস্যা মেটাতে ক্রমাগত যুদ্ধের ফরমানে রক্ত এবং আহত করছে, এমনটাই সংবাদমাধ্যমকে জানালেন তিনি। শুধু তাই নয়, বিঁধলেন সোশ্যাল মিডিয়ায় যুদ্ধের পক্ষে গলা ফাটানো ‘যোদ্ধা’দেরও।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আত্মঘাতী জঙ্গী হামলায় পুলওয়ামাতে ৪৪ জন সেনার শহীদ হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল গোটা দেশ। প্রত্যাঘাতের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়াও। এর পরে ২৬ তারিখ কাকভোরে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক করে জঙ্গী ঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করে ভারতীয় বায়ুসেনা। তার পর থেকেই কার্যত যুদ্ধ পরিস্থিতি সীমান্তে। পরপর সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়েছে পাকসেনা। জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাও। আর জবাব দিতে গিয়েই বুধবার কাশ্মীরের বদগামে ভেঙে পড়ে ভারতীয় সেনার যুদ্ধবিমান। প্রাণ হারান বিজেতার স্বামী, এয়ার পাইলট নিনাদ। এর পর থেকেই কার্যত প্রশ্নচিহ্নের মুখে বিজেতার জীবন।
অন্যদিকে, এরইমধ্যে ক্রমশ উত্তাপ বাড়ছে সীমান্তে। আঘাত-পাল্টা আঘাতে প্রায় প্রতি দিনই শহীদ হচ্ছেন একাধিক জওয়ান। কিন্তু এই মৃত্যু যেন আরও বেশি করে তাতাচ্ছে মানুষকে। তার প্রতিফলন সোশ্যাল মিডিয়াতেও স্পষ্ট। যুদ্ধের পক্ষে গলা ফাটাচ্ছেন নেটিজেনরা। তাঁদের দাবি, পাল্টা মারই সন্ত্রাস রোধের একমাত্র অস্ত্র। সীমান্তে শান্তি নয়, প্রতিশোধই তাঁদের মুখ্য চাহিদা। যাতে বলি হচ্ছেন একের পর এক জওয়ান। এই আবহেই বিজেতার বার্তা, যুদ্ধ থামানোর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যাঁরা যুদ্ধের পক্ষে সওয়াল করছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বিজিতা বলেন, ‘আপনারা যদি আমার নিনাদের জন্য সত্যিই কিছু করতে চান, তা হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় চিৎকার না করে একটা ছোট্ট কাজ করুন। হয় বাহিনীর সঙ্গে নিজেরা যুক্ত হয়ে যান, নয় পরিবারের কাউকে সেই দায়িত্ব দিন। আর সেটাও না পারলে আরও ছোট কাজ করুন। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখুন। রাস্তা নোংরা করবেন না, মহিলাদের হেনস্থা করবেন না। তা হলেই নিনাদের জন্য বা দেশের জন্য কিছু করা হবে।’
তিনি আরও বলেন যে, ‘আমরা যারা নিজের লোক হারিয়েছি, তারা কখনই যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধের ক্ষতি কী, সেটা আপনারা জানেন না বলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় গলা ফাটান যুদ্ধ চেয়ে। আরও নিনাদের প্রাণ যাক, সেটা আমরা চাই না। সোশ্যাল মিডিয়ার যোদ্ধারা এবার থামুন। এখনও যদি আপনারা যুদ্ধ চান তা হলে দয়া করে সীমান্তে যান।’ উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে বায়ুসেনায় যোগ দেন নিনাদ। দক্ষ এয়ার পাইলট হিসেবে সুখ্যাতি ছিল তাঁর। গত বুধবার কাশ্মীরের বদগামে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে ভেঙে পড়ে এমআই ১৭। তাতেই ছিলেন নিনাদ। এই ঘটনায় বায়ু সেনার আরও ছ’জন সদস্যের মৃত্যু হয়। প্রাণ যায় এক সাধারণ নাগরিকেরও।