দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। ভোটের দামামা বাজিয়ে দিয়েছে দেশের প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলই। তবে পুলওয়ামা পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সেই কাজ করা শোভা পায় না। কিন্তু ভোট বড় বালাই। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছেও দেশের চেয়ে রাজনৈতিক প্রচারই আগে হয়ে যায় কোনও কোনও সময়। যেমন পাকিস্তানে বন্দী ভারতীয় পাইলটকে কীভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা না করে আজ ‘বিশ্বের বৃহত্তম ভিডিও কনফারেন্স’ করলেন নরেন্দ্র মোদী!
প্রসঙ্গত, পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার পর থেকেই ক্ষোভের আগুন জ্বলছে গোটা দেশ। ক্রমশই যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে। ইতিমধ্যেই একাধিকবার জারি করা হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা। এরইমধ্যে লোকসভা নির্বাচন নিয়ে দলীয় সমর্থকদের যাবতীয় পরামর্শ দিতে বিজেপির তরফ থেকে আজ আয়োজন করা হয়েছিল এক ভিডিয়ো কনফারেন্সের। যাকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম ভিডিয়ো কনফারেন্স’ বলেই দাবি করেছে গেরুয়া শিবির। মেরা বুথ, সবসে মজবুত- বিজেপির এই কর্মসূচিতে গোটা দেশের কর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফরান্সের মাধ্যমে কথা বলার সময় হঠাতই কৌশলে সেনাবাহিনীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন প্রধানমন্ত্রী!
তিনি সরাসরি বললেন, ‘সীমান্তে নিজেদের শক্তি দারুণভাবে প্রদর্শন করেছে সেনাবাহিনী। সীমান্তের ওপারে গিয়েও তারা নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়েছে। গোটা দেশ এখন সেনাবাহিনীর পাশে রয়েছে।’ মোদীর কথায়, ‘আমরা একসঙ্গে থাকব, একসঙ্গে এগিয়ে চলব, একসঙ্গে লড়াই করব, একই সঙ্গে জিতব।’ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এই ‘আমরা’ কারা? এই প্রশ্ন ওঠার কারণ, বিরোধীরা প্রথম থেকেই এই ইস্যুতে সরকারের পাশে থাকার বার্তা দিলেও প্রধানমন্ত্রী গণতান্ত্রিক প্রথা মেনে এখনও পর্যন্ত নিজে থেকে কোনও সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেননি। এমনকি গতকাল সংসদের লাইব্রেরি কক্ষে হওয়া ২১ বিরোধী দলের বৈঠকে, এ নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দেন বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। তাই তাঁদের পাশে নিয়ে চলার কথা যে মোদী বলেননি, তা স্পষ্ট।
তাহলে ধরে নেওয়াই যায়, এক্ষেত্রে ‘আমরা’ বলতে মোদী গেরুয়া শিবিরের কথাই বলতে চেয়েছেন। অর্থাৎ বিরোধীরা বারবারই যে অভিযোগ করছিল, এবার এই ইস্যুতে রাজনীতি জড়িয়ে দিয়ে সেই অভিযোগকে সত্যি বলে প্রমাণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, গতকালের বৈঠকে যে ২২ লাইনের প্রস্তাব নেওয়া হয়, তাতে স্পষ্ট বলা হয়, পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জয়েশ-ই-মহম্মদ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় যে জঙ্গী হামলা চালিয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তার জবাব দিতে ২৬ তারিখ বায়ুসেনা যেভাবে পাল্টা আঘাত করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু সেনার আত্মত্যাগ নিয়ে বিজেপিকে কোনওভাবেই রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু আবারও সেই ঘৃণ্য কাজটিই করলেন মোদী।