গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় হওয়া জঙ্গী হামলার পর থেকে বিরামহীন ভাবে প্রতি মুহূর্তেই একের পর এক খবর দিয়ে চলেছে ‘সূত্র’। কোনওটি কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্র, কোনওটি বিজেপির, কোনওটি আবার সটান প্রধানমন্ত্রীর দফতরের। পাকিস্তানের মাটিতে জইশ শিবিরে ফেলা ভারতীয় বায়ুসেনার বোমার ওজন ১০০০ কেজি, নিহত জঙ্গীর সংখ্যা তিনশোরও বেশি, গত কাল সারা রাত জেগে অপারেশনের উপরে নজর রেখেছেন নরেন্দ্র মোদী, প্রধানমন্ত্রীর শর্ত ছিল— বায়ুসেনার পাইলটেরা যেন অক্ষত ফিরে আসেন, অভিযান শেষ হওয়ার পরে সব ক’টি মিরাজ যুদ্ধবিমানের পাইলটের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী— কোনও খবরই বাদ নেই।
তথ্য প্রচুর। অথচ গতকালের সাংবাদিক সম্মেলনে এর কোনওটিই বলেননি বিদেশসচিব বিজয় গোখলে। একটি লিখিত বিবৃতি পড়েছেন। একটি প্রশ্নও তাঁকে করতে পারেননি সাংবাদিকেরা। বিদেশসচিবের বিবৃতিতে নিহতের নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো হয়নি। সর্বদল বৈঠকেও কোনও সংখ্যা বলতে পারেননি বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এদিকে, বায়ুসেনার অভিযানের খবর পেয়ে প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক বিরোধীই বার্তা দিয়েছেন বাহিনীর পাশে থাকার। কিন্তু একান্তে তাঁরাও প্রশ্ন তুলেছেন, এত গুরুত্বপূর্ণ সব খবরের একটিও কেন সরকারি কোনও পদাধিকারীর প্রকাশ্য বিবৃতিতে নেই? তা হলে এই সব খবরের উৎস কী?
ঘটনা হল, ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানের খবর বিদেশসচিব জানানো মাত্রই বিজেপির একাধিক সূত্র সেই অভিযানের ‘খুঁটিনাটি’ জানাতে শুরু করেন। ‘সূত্র’রাই দাবি করেন, নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া লঞ্চপ্যাড থেকে খাইবার পাখতুনখোয়ার বালাকোটের পাহাড়ি শিবিরে জড়ো হয়েছিল কয়েকশো জঙ্গী। গতকাল রাতেও এক সূত্র দাবি করেছেন, নিজের বাসভবনে তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে ফের তাঁদের ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও নাকি ছিলেন বৈঠকে। সেনাকে বলা হয়েছে, কবে, কখন, কীভাবে জবাব দেওয়া হবে— তারাই ঠিক করুক। কিন্তু এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা সরকারি তরফে কোনও বিবৃতি নেই!
আবার ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা টুইটারে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন, ‘সূত্র উদ্ধৃত করে তিনশোর বেশি মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে। যার কোনও ভিত্তিই নেই। সেই অঙ্কটি সরকার যাচাই করলে আনুষ্ঠানিক ভাবে আমাদের তা জানাত।’ ফলে প্রশ্ন উঠছেই, কারা এই সূত্র? আর সরকারি খোলাখুলি বিবৃতিতেই বা সমস্যাই কোথায়? কিন্তু এর উত্তরে মুখে কুলুপ এঁটেছে সব সূত্রই! ফলে মূল প্রশ্ন এখন একটাই, ‘সূত্র, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ?’