পাকিস্তানে ঢুকে একাধিক জঙ্গী ঘাঁটি ধ্বংস করে অক্ষত অবস্থায় দেশে ফিরে আসায়, ভারতীয় বায়ুসেনার ভূয়সী প্রশংসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে সাফ জানিয়ে দিলেন, শহীদের রক্ত নিয়ে বিজেপিকে রাজনীতি করতে দেব না। গতকাল সংসদ ভবনের লাইব্রেরি কক্ষে হওয়া বিরোধীদের বৈঠকে ঠিক এই ভাষাতেই গর্জে উঠলেন মমতা। বললেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা সবাই সরকারের পাশে আছি, অথচ প্রধানমন্ত্রী এমনই যে এখনও পর্যন্ত তিনি নিজে একটাও সর্বদলীয় বৈঠক ডাকলেন না? এরপরেই তাঁর হুঙ্কার, নিরাপত্তারক্ষীরা প্রাণ হারাচ্ছে আর সেটিকে নিয়ে মোদী-অমিত শাহরা রাজনীতি করছেন। এটা মানা যায় না। আর যাই হোক শহীদের রক্ত নিয়ে ওদের রাজনীতি করতে দেব না।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভোর রাতে পাক অধিকৃত কাশ্মীর-সহ সে দেশের বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ারস্ট্রাইকের পর দু-দেশের মধ্যে সম্পর্কে অবনতি হওয়ায় পূর্ব নির্ধারিত এজেন্ডা বাতিল করে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন কংগ্রেস, তৃণমূল, টিডিপি, সিপিএম, বসপা, এনসিপি, আরজেডি, ডিএমকে, এলজেডি, আপ, জেডি(এস)-সহ প্রায় সমস্ত বিজেপি বিরোধী দলগুলি। সেখানে পুলওয়ামার ঘটনায় সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি পাকিস্তানে ঢুকে বদলা নেওয়ার বিষয়টিতে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রশংসা করলেও, তা থেকে মোদীকে কোনওভাবেই রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে দেওয়া হবে না বলে একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় বিরোধীরা। বলা যায়, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বিজেপি বিরোধী ২১ দলের সুর বেঁধে দিলেন বাংলার মমতাই।
বুধবারের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সোনিয়া গান্ধী। সেখানে রাহুল গান্ধী, শরদ পাওয়ার, চন্দ্রবাবু নাইডুদের উপস্থিতিতে সবকটি দলের প্রতিনিধিদের মমতা বলেন, ‘অনেক হয়েছে। এবার আমাদের দৃঢ় হতে হবে। রক্ষণাত্মক হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। পুলওয়ামা বা বায়ুসেনার অভিযান নিয়ে ৩-৪ দিন পর প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যা বলার আজই বলতে হবে।’ তিনি এ-ও বলেন যে, ‘বিজেপি উগ্র দেশপ্রেমের রাজনীতি করছে। এইভাবে পুরো বিষয়টি একাই হাইজ্যাক করতে চান মোদী। তা হতে পারে না। সাফল্য বায়ুসেনার। এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই ও প্রতিক্রিয়া দরকার।’ এরপর একে একে অন্যান্য দলের সব বক্তাই মমতার বক্তব্য মেনে নেন।
সেই মতো আলোচনার শেষে ২২ লাইনের একটি প্রস্তাব পাশ হয়। মমতার সুর ধরেই তৈরি হয় বিরোধীদের বৈঠকের ওই সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের খসড়া। বিকেলে বৈঠক শেষে মমতা, চন্দ্রবাবু, শারদ পাওয়ারদের পাশে নিয়ে যা পাঠ করে শোনান রাহুল গান্ধী। সেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়, পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জয়েশ-ই-মহম্মদ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় যে জঙ্গী হামলা চালিয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তার জবাব দিতে ২৬ তারিখ বায়ুসেনা যেভাবে পাল্টা আঘাত করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু সেনার আত্মত্যাগ নিয়ে শাসক দলকে কোনওভাবেই রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। যৌথ বিবৃতি পাঠের সময় মমতাকে পাশে নিয়ে রাহুল এ-ও বলেন, ‘দুঃখের বিষয়, পুলওয়ামা হামলার পর গণতান্ত্রিক প্রথা মেনে সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা এবং ঐক্য বজায় রাখতে সরকারকে যে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানানো হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, বিগত দু-তিন বছর ধরে জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন বাংলার বাঘিনী মমতা। এ কাজে তিনি পাশে পেয়েছেন টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু, এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার, সপা প্রধান অখিলেশ যাদব, ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন এবং আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব ও আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে। ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে হওয়া ইউনাইটেড র্যালিতে তিনি গোটা দেশকে যে বিরোধী ঐক্যের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন গতকালের বৈঠকে তারই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।