২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই গ্রামীণ এলাকায় সেচের জলের সঙ্কট কাটাতে এবং পাশাপাশি মাছের চাষ বাড়াতে এই প্রকল্প শুরু করিয়েছিলেন মমতা। পরে এই প্রকল্পকে ১০০ দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত করার ফলও মিলেছে হাতেনাতে। এতে একদিকে যেমন গ্রামীণ এলাকায় দু’লাখেরও বেশি পুকুর, জলাশয় আর খাল খনন পরিবেশ রক্ষার কাজে সহায়ক হয়েছে, তেমনই আবার গরিব মানুষকে রোজগারের সুযোগও করে দিয়েছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মা-মাটি-মানুষ সরকারের যে ‘মিশন-২১’কে সামনে রেখে প্রচারে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে জোড়াফুল শিবির, তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পটি।
শুখা এলাকাকে সেচসেবিত করা এবং মাছের চাষ বৃদ্ধিতে রাজ্যে ক্রমেই সহায়ক হয়ে উঠছে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত এই প্রকল্প গত সাত বছরের বেশি সময় ধরে গ্রামীণ এলাকার সেচ ব্যবস্থায় বড়সড় সাফল্যও এনেছে। প্রসঙ্গত, ক্ষমতায় আসার পরে গত সাড়ে সাত বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়নে যে সমস্ত কর্মসূচি ও প্রকল্প গ্রহণ করেছিল, তারই সাফল্যের কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশন-২১। তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও জনপ্রিয় প্রকল্প ‘জল ধরো জল ভরো’।
জল ধরো জল ভরো প্রকল্পটি আদতে রাজ্যের ক্ষুদ্রসেচ ও জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের। পরে ১০০ দিনের কাজের সঙ্গে তা যুক্ত হওয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। মাছ চাষের তদারকির জন্য যুক্ত হয়েছে মৎস্য দপ্তরও। পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে শুধুমাত্র ১০০ দিনের কাজের আওতায় এই প্রকল্পে ৩৩৭০টি পুকুর বা জলাশয় তৈরি করা হয়েছে। ১০০ দিনের কাজের বাইরে দপ্তরের তত্ত্বাবধানে আরও ৮৩২৭টি পুকুর খনন করা হয়েছে। ক্ষুদ্রসেচ ও জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭-১৮ সালে এই প্রকল্পের আওতায় ৩৭১৪৬টি জলাশয় তৈরি হয়েছে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ২৩০৫টি ক্ষুদ্রসেচ প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়তি ৭৪৬০৬ হেক্টর জমিকে সেচসেবিত করা হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বীরভূমের শুখা এলাকায় এই প্রকল্প অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্রটি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই সমস্ত জেলায় ‘জল ধরো জল ভরো’র আওতায় ৭৮৬টি ক্ষুদ্রসেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫৩১৯ হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
প্রকল্প শুরু হওয়ার প্রথম চার আর্থিক বছরের মধ্যেই রাজ্যে জলাশয়ের সংখ্যা বেড়েছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার। পাশাপাশি বেড়েছিল শুখা এলাকায় সেচসেবিত জমির পরিমাণও। মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় যেমন সেচের জলের সংস্থান হচ্ছে, তেমনই আবার মাছের চাষও বাড়ছে। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, গত বছর রাজ্যে মোট মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৭.৪২ মেট্রিক টন। যার মধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে খনন হওয়া জলাশয়ের মাছের একটা বড়সড় অংশ রয়েছে। শতকরা হিসেবে যা প্রায় ২০ শতাংশ। আগামী বছর রাজ্যে মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ১৮.৫ মেট্রিক টন। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এই প্রকল্প অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা নেবে বলে আশা করছেন মৎস্য ও পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা।