মাঝেমধ্যেই খবর আসে পাগলা হাতির দলের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন কোনও পর্যটক। কিন্তু এবার উলট পুরাণ। চার বছরের এক শিশুকে হাতির দলের হাত থেকে বাঁচিয়ে রক্ষা করল খোদ ওই দলেরই এক হাতি। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়িতে গরুমারা জঙ্গল সংলগ্ন ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে। বন দফতর সূত্রে জানা গেছে, ওই শিশুটি স্কুটার থেকে পড়ে গিয়েছিল।
লাটাগুড়ির জঙ্গলের ভেতরের মন্দিরে পুজো দিয়ে স্কুটারে করে বাড়ি ফিরছিল ঘোষ পরিবার। চালকের আসনে ছিলেন পেশায় ব্যবসায়ী নীতু ঘোষ। পিছনের সিটে বসে ছিলেন তাঁর স্ত্রী তিতলি এবং মেয়ে অহনা। এই জাতীয় সড়ক জঙ্গলটিকে দু’ভাগে ভাগ করে। ওই রাস্তা ধরেই স্কুটারে করে ফিরছিল ঘোষ পরিবার। মাঝরাস্তায় আচমকাই তাঁদের গাড়ি থামাতে হয়, কারণ তাঁরা দেখেন একদল হাতি রাস্তা পার করছে। তাঁরা থেমে যান, হাতির দল পেরিয়ে গেলে রাস্তা পার করতে যান। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারেননি আরেকটি দল রয়েছে হাতির।
নিতু ঘোষ স্কুটার নিয়ে রওনা দিতে না দিতেই ওই হাতির দলটিও রাস্তায় এসে পড়ে। স্কুটারটি হাতির দলের মাঝে পড়ে যায়। এরপর তড়িঘড়ি করে নীতু স্কুটারে ব্রেক কষতেই ঘটে যায় বিপত্তি। স্কুটার থেকে ছিটকে পড়েন তিনজনই। এরপরেই হাতির পাল থেকে বেরিয়ে আসে এক সদস্য, চার বছরের অহনা যেখানে পড়েছিল সেখানেই দুই পা দিয়ে আড়াল করে দাঁড়ায়। দলের অন্যান্য সদস্যরা পেরিয়ে যায় নির্বিঘ্নে। ফলে বেঁচে যায় ছোট্ট অহনার প্রাণ।
অতীতে বেশ কয়েকটি ঘটনায় হাতিদের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন বহু পর্যটক। ঘোষ পরিবার যে সমস্যায় পড়েছে তা বুঝেই এক ট্রাক চালকও তাঁর গাড়ি থামিয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। হাতির দলটিকে তাড়া দিতে জোরে জোরে হর্ণ বাজাতে থাকেন তিনি। নিজগতিতে পেরিয়ে যায় হাতির দল। সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে অহনাকে কোলে তুলে নেন তিতলি।
এরপর ওই ট্রাকচালকই ঘোষ পরিবারকে লাটাগুড়ি পৌঁছে দেন। নীতু ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী আহত হওয়ায় জলপাইগুড়ি নার্সিংহোমে ভর্তি হন তাঁরা। সেখানেই প্রাথমিক চিকিৎসা চলে তাঁদের। তবে মেয়ে অহনার তেমন আঘাত না থাকলেও এই ঘটনায় বেশ ভয়ের মধ্যে রয়েছে সে। এই ঘটনার পর দক্ষিণ গরুমারা জঙ্গলের রেঞ্জার অয়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘কখনও কখনও বনের এক অংশ থেকে অন্য দিকে যাওয়ার সময় হাতিরা জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে। যদি সময়মতো জানানো হয়, তাহলে বন বিভাগের কর্মীরা হাতিদের ভয় পাইয়ে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পটকা ফাটান।’
কথায় আছে, রাখে হরি মারে কে? সেই প্রবাদটিই এবার ফলে গেল ঘোষ পরিবারের ক্ষেত্রে। তাঁদের ছোট্ট অহনা প্রাণে বেঁচে যাওয়ায় নীতু-তিতলি দুজনেই খুশি।