ওদের মাতৃভাষা জাপানি। কিন্তু মাছের ঝোল ওদের বড় প্রিয়। বাঙলা গানের সঙ্গেই ওদের যাবতীয় প্রেম। বাংলা কবিতা বুকে নিয়েই ওরা স্বপ্ন দেখে। তাই বাংলা ভাষা ওদের বড় আপনার। শুধু বাংলার প্রেমে পড়েই ওঁরা এই ভাষাকে আপন করে নিয়েছে। আর তাই আজ বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে ওঁরা অর্থাৎ নানা নেগাতা, কাহো ওয়াতানাবে, আকারি সাসাকিরার মতো মোট ১০ জন জাপানি গাইছেন, ‘আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই’।
শুধু বাংলা ভাষা শিখবেন বলেই মাত্র দুসপ্তাহ আগে জাপান থেকে বাংলায় ছুটে এসেছেন ওঁরা। জাপানের টোকিয়ো ইউনিভার্সিটি অফ ফরেন স্টাডিজের সঙ্গে কিছুদিন আগে একটি মউ স্বাক্ষর হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই মউয়ের মাধ্যমে জাপানের ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছসপ্তাহের জন্য মোট ১০ জন পড়ুয়া যাদবপুরে বাংলা ভাষা শিখতে এসেছেন। যাদবপুরের বাংলা বিভাগ এই পড়ুয়াদের সেই শিক্ষাদানের ভার নিয়েছে। কিন্তু এই ভাষা শিক্ষার ক্লাসকে কেবল পুঁথিগত করে রাখতে চাননি বিভাগীয় শিক্ষকরা।
ভারতের নানা প্রান্তে জাপানি বিনিয়োগ বাড়ছে। বহু জাপানি বিভিন্ন ভারতীয় সংস্থায় কর্মরত। দেশের ভাষা, আদব-কায়দা শেখার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেই পড়ুয়াদের এমন বহু আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষিত করে তোলার নীতি নিয়েছে সে দেশের সরকার। যে সূত্র ধরে এই পড়ুয়ারা বাংলা পড়তে এসে ধীরে ধীরে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এই শহরের বঙ্গজ ক্যাকোফোনির সঙ্গে।
রবীন্দ্রনাথের গান ওঁরা শিখেই এসেছেন। এখানে ওঁদের শেখানো হবে বাংলা লোকগীতি, লোকনৃত্য। দেখছেন সত্যজিৎ, ঋত্বিকের সিনেমা। পড়ছেন জীবনানন্দ, বুদ্ধদেব থেকে মঙ্গলকাব্যও। কলকাতার আন্তর্জাতিক বইমেলাতেই এসেছিলেন এঁরা। কিনে নিয়ে গেছেন রান্নার বই। দক্ষতা বেড়েছে ভাষার ওপর। দশ জাপানির মুখে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ শুনে বাংলা ভাষার ওপর তাদের প্রেম ও দক্ষতার সেই নমুনাই আজ চাক্ষুষ করবে কলকাতাবাসী।