ধরুন আপনার দেশের মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য আপনি কিচ্ছুটি করছেন না কিন্তু প্রতিবার একজন করে মেয়ে ধর্ষিতা হলে, আপনি আশ্বাস দিচ্ছেন, ধর্ষকের ফাঁসি হবে, তার নির্বীজকরণ হবে ইত্যাদি। একবার সত্যি ফাঁসিতে চড়িয়েছেন৷ কিন্তু সে তো একবার৷ বারবার তো পাকিস্তানি ন্যাড়া সার্জিকাল বেলতলায় যাবে না।
হ্যাঁ, সার্জিকাল স্ট্রাইক হবে সার্জিকাল স্ট্রাইক হবে বলাটা আসলে সেরকম। একবার হতে পারে। দুবার হতে পারে। বারবার হয় না। এটা অনেকটা আপনাকে বলে কয়ে দু’মিনিট পরে ধাপ্পা দেওয়া। কোন সারপ্রাইজ এলিমেন্ট নেই। মানে উরি পার্ট টু হওয়ার সম্ভাবনা ও নেই৷
তাই অযথা যুদ্ধ যুদ্ধ হিরিক না তুলে, খামতিগুলো আগে খতিয়ে দেখুন। ঢাল তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সরদার হবেন না না অজিত ডোভাল হবেন আপনি বিচার করুন। যদি দ্বিতীয়টা হন, তবে নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখবেন কোন হরিদাস পাল হালকাভাবে নিয়েছিল আইবি নোটকে। তাকে বা তাদের খুঁজে বের করুন। কারণ গোয়েন্দারা স্পষ্ট উল্লেখ করেছিল, আইইডি ব্যবহার হতে পারে আসা যাওয়ার পথে। স্যানিটাইজ করে তবে চলুন।
চায়ের দোকানে বিরাট বিরাট অজিত ডোভাল বসে চা প্রজাপতি বিস্কুট খাচ্ছে সন্ধেবেলা থেকে৷ একটু কান পাতলেই শুনবেন র, আইবি, মোসাদ, এনআইএ, এফবিআই মিলে লাল চা খেতে খেতে হারুদার দোকানে আলোচনা করছে, কোন পথ দিয়ে সার্জিকাল স্ট্রাইক বা পরমাণু হামলা করলে পাকিস্তান সায়েস্তা হবে৷
লালচে চায়ের উর্দ্ধে আপনি যদি মনেপ্রানে ও লালচে হোন, তবে গোটা হামলাটা নিয়েই একটা হাইলি সাসপিশিয়াস বাতাবরণ তৈরি হবে৷ জৈশ এ মহম্মদ ভিডিও রিলিজ করে দায় স্বীকার করলে ও সন্দেহ করে যেতে হবে চক্রান্ত হিসবে৷ কারণ এ সরকারের মধুতে ও গু গু গন্ধ পাওয়া যায়। কারণ এ সরকার ফ্রিজ খুলে মাংসের গন্ধ শোঁকে নাকি।
এবার ধরুন দারুণ জাতীয়তাবাদী কাউকে দেখতে পেলেন। সে সজ্ঞানে গুলিয়ে ফেলবে লড়াইটা পাকিস্তানের সাথে না মুসলমানদের সাথে। মানে তার কথায় কারবারে আজ থেকে দেখবেন আরো সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ঝিলমিল করবে৷ প্রথমে তারা প্রায় সীমান্তে চলে যায় আরকি। তারপর ওটা একটু চাপের হয়ে যাবে ভেবে পাকিস্তান হাইকমিশনারকে পাথর ছুঁড়ে মারবে ঠিক করে। কিন্তু সেটাও চাপের। জেলে সুদ্ধ শাকাহারি ফ্যানভাত খেতে হবে৷ অগত্যা হাতের কাছে যে ফেজটুপি আর লম্বা দাড়ি চোখে পরে, তাকেই টার্গেট করবে বলে ঠিক করে।
ফেজটুপি আর লম্বা দাড়ি ও তখন আপ্রাণ লেগে পরেছে দেশত্ববোধ প্রমান করতে। কারণ সে জানে এসব পরিস্থিতিতে বিগত ৭০বছর ধরে তাকেই সন্দেহ করা হয়েছে৷ সে এসব দিনে বাড়িতে পাগলু ডান্স শুনলে ভাবা হয়েছে সে হামলাকে উদযাপন করছে, সে কারোর সাথে এই নিয়ে তক্কো করলে ধরে নেওয়া হয়েছে সে পাকিস্তানের স্বপক্ষে গলা ফাটাবে। তাই সে আজ দারুণ ক্ষিপ্ত। পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে আজ তার ফের অগ্নিপরীক্ষা দেওয়ার দিন যে সে ভারতীয়।
এসবের বাইরে ও একটা শ্রেণী আছে যারা স্কচ খেতে খেয়ে কুচকি চুলকিয়ে লিখছে, সেনা তো আসলে আর পাঁচটা চাকুরিজীবী। আর মৃত্যুটা Work Hazard। সে টাকা পাচ্ছে দেশ সেবার জন্য। তার বাড়ির লোক জানতো সে মারা যাবে একদিন সীমান্তে। এই যুক্তি মেনে, একটি Manual Scavenger এর পরিবার ও জানে যে সে বিনা কোন সামাজিক সুরক্ষা ছাড়া একদিন গু তুলতে গিয়ে ম্যানহোলে দম আটকে মরে যাবে। ডাক্তারের বাড়ির লোক ও জানে যে ডাক্তারবাবু হয়তো একদিন পেশেন্ট পার্টির কাছে গণধোলাইয়ে মারা যাবে। কবির স্ত্রী ও হয়তো জানতো যে একদিন কবি ট্রামে চাপা পড়ে মারা যাবে।
এরপর দিন ফুরবে। নতুন খবর আসবে হয়তো কোন। সিআরপিএফ জওয়ানদের কফিন আঁকড়ে থাকা পরিজনের ছবি পিছনের সারিতে বসবে। সামনে জায়গা করে নেবে নতুন কোন শিরোনাম। ততদিন অবধি আমরা অপেক্ষা করবো। আমার কিন্তু বদলা নিতে আজ ও ভালো লাগে। গলার কাছে দলা পাকিয়ে আসে অন্ধকার হলে নায়ক যখন বাপ কা, দাদা কা, ভাই কা, সবকা বদলা নেয়। আমি আশা করে থাকি এই বুঝি খবর এলো প্রতিঘাতের। আমরা আশা করে থাকি। আশা নিয়ে ঘর করি৷ পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ৷
যারা যুদ্ধ চায়, তারা যুদ্ধে যায় না। যারা যুদ্ধে যায়, তারা যুদ্ধ চায় না।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )