তৃণমূলকে চমকে-ধমকে কোনও লাভ হবে না। বরং বিজেপি যত আক্রমণ করবে, যত অত্যাচার করবে, তৃণমূল ততই শক্ত হবে, বলবান হবে। বিজেপি ভেবেছে বাংলার মানুষকে সিবিআই এবং ইডির ভয় দেখিয়ে রাজ্যটাকে দখল করবে। আমি বলি, বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি। বাংলা কখনও নতজানু হতে শেখেনি। বুধবার ওন্দা হাই স্কুল মাঠে জেলা তৃণমূল আয়োজিত এক জনসভায় এই ভাষাতেই সুর চড়ান যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
অভিষেক বলেন, ‘১৯ জানুয়ারির ব্রিগেডে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা আমাদের নেত্রীকে সমর্থন জানিয়ে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই আগামীদিনে দেশ থেকে বিজেপি নির্মূল হবে। দেশে একাধিক দল রয়েছে। এত নেতা, নেত্রী আছেন, কেউ কখনও মোদীর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে সাহস করেননি। যা করে দেখিয়েছেন আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ এখানেই না থেমে তিনি বলেন, ‘তৃণমূলকে চমকে-ধমকে কোনও লাভ হবে না। বরং ওরা যত আক্রমণ করবে, যত অত্যাচার করবে, তৃণমূল তত শক্ত হবে, বলবান হবে। ওরা দু’একটা গদ্দারকে সঙ্গে নিয়ে ভাবছে বাংলা দখল করবে। ওদের ওই স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে না। ওরা ধর্মের নামে রাজ্যটাকে বিভাজন করতে চাইছে। কিন্তু আমরা তা কখনওই হতে দেব না।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই পড়শি জেলা পুরুলিয়ায় জনসভা করে রাজ্যের গণতন্ত্র বিপন্ন বলে মন্তব্য করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। গতকাল ওন্দার জনসভা থেকে যোগীকে পাল্টা কটাক্ষ করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘পুরুলিয়ায় জনসভা করেন যোগী, যাঁর নিজের রাজ্যে ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করা হয়, পুলিশ খুন করা হয়। তাঁর মুখ থেকে বাংলার মানুষ গণতন্ত্রের কথা শুনবেন না। আমরা শুনব না।’ ধর্ম প্রসঙ্গে বলেন তিনি, ‘আমরা সেই শিশুবেলা থেকে শিখে এসেছি, নিজের ধর্মের প্রতি আস্থাশীল, অপর ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তৃণমূল যতদিন ক্ষমতায় থাকবে এই রাজ্যকে ধর্মের নামে কেউ বিভাজন করতে পারবে না।’
বিজেপিকে আরও তীব্র আক্রমণ করে তৃণমূলের যুব সভাপতি বলেন, ‘গোটা দেশ জানে বিজেপির গণতন্ত্র মানে মানুষ মারার ষড়যন্ত্র। আমরা লক্ষ্য করছি, বিজেপির ক্ষমতা যত কমছে, পেট্রোল, ডিজেল থেকে জিএসটির হার তত কমছে। তাই ওদের যদি ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়, জিনিসপত্রের দাম আরও কমবে। সব কিছু থাকবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে।’ আবার সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় তৃণমূলনেত্রীর অনশনের প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গুর আন্দোলন অনশনের আগুনে ভস্মীভূত হয়েছিল বামেরা। ফের সেই একই জায়গা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন শুরু হয়েছে। সেই আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যাবে বিজেপি।’ তাঁর কথায়, মমতার পথেই সারা দেশ হাঁটতে চাইছে।
ওন্দা বিধানসভা বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। ওই লোকসভার সাংসদ সৌমিত্র খাঁ তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। সৌমিত্রকে ‘ফেসবুক নেতা’ বলে মন্তব্য করে বাঁকুড়ার দলীয় পর্যবেক্ষক বলেন, ‘সংসদে এলাকার সমস্যার কথা না তুলে তিনি শ্বশুরবাড়ির সমস্যার কথা বলছেন। আসন্ন নির্বাচনে তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী দিল্লি যাবে।’ অভিষেকের অভিযোগ, ‘সৌমিত্র নিজের সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করতে পারেননি। আসন্ন ভোটে এই এলাকার একটিও বুথেও তাঁর অস্তিত্ব থাকবে না।’
গতকাল অভিষেকের সভায় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। যা দেখে তিনি বলেন, ‘এই সভায় হাজার হাজার মানুষ এসেছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। সবাই এসেছেন তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে। আমি এসেছি তাঁরই বার্তা নিয়ে। যত দিন যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে আমাদের নেত্রীর জনপ্রিয়তা আরও বাড়ছে। আকাশচুম্বী হয়েছে। মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ততা দেখেই মনে হচ্ছে লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের মতোই লোকসভাতেও ঐতিহাসিক ফলাফল হবে।’