সংবিধান বাঁচানোর লক্ষ্যে গত রবিবার রাত থেকে মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসার পর থেকেই গোটা বাংলা তাঁর প্রতি সমর্থনের হাত অকুণ্ঠ ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছেন। সোমবার এবং মঙ্গলবার দু’দিন ধরেই বিভিন্ন জায়গাতে মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। শুধু জেলায় প্রতিবাদই নয়, মমতার পাশে থাকতে মেট্রো চ্যানেলে এসে মিশে গেল বাঘমুন্ডি থেকে বনগাঁ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোরালো অভিযোগ যে–সব ইস্যুকে ঘিরে, সে–সব আমজনতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার কার্যত সর্বভারতীয় ‘প্ল্যাটফর্ম’ হয়ে উঠেছিল মেট্রো চ্যানেল। মঙ্গলবার সকাল থেকে শেষ বিকেলের আলো যতক্ষণ ছিল, আমজনতার উঁকিঝুঁকি কমেনি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে যেমন দেখার উৎসাহ তেমনই তাঁর মোদি–বিরোধী জ্বালাময়ী বক্তৃতা শোনার আগ্রহ।
মঞ্চের সামনে ব্যারিকেডের ওধারে ভিড়ের মধ্যেই উঁকিঝুঁকি মারছিলেন কৃশকায় যুবক মানকে ওরাওঁ, পাশে তাঁর স্ত্রী রুমনি। মমতা যখন মাইক হাতে বলছেন, অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন ওঁরা। এত কাছ থেকে কী দেখে আপ্লুত তাঁরা? ‘কিছু দিন আগেই পুরুলিয়ায় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অনেক দূর থেকে দেখেছিলাম। এবারে তাঁর ধর্নার খবর শুনে রাতেই ট্রেনে করে চলে এসেছি।’ বাড়ি কোথায়? জবাব দিলেন মানকে, ‘চড়িদা। বাঘমুন্ডির কাছে। জানেন না, ছৌ নাচের জন্য বিখ্যাত?’ বনগাঁর যুবতী চুমকি পাল কলেজে ছাত্র রাজনীতি করেন। সকাল সকাল তিনিও ছুটে এসেছেন মমতার পাশে দাঁড়াতে। বোঝাই যায়, এঁদের মতো বহু মানুষের আবেগ তাঁদের টেনে নিয়ে এসেছে মমতার মঞ্চে।
সন্ধের কিছু আগে এসে পৌঁছলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু ও লালু–পুত্র আরজেডি নেতা তেজস্বী। স্বাগত জানিয়ে তাঁদের মঞ্চে নিয়ে এলেন পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এঁদের দেখে গুঞ্জন আরও বাড়ল জনতার। ঘন ঘন স্লোগান উঠছে তখন, ‘বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও’। পাশের ভিড় থেকে জনতা বলে উঠল, ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, চৌকিদার চোর হ্যায়...’। মাইক টেনে নিয়ে চন্দ্রবাবু জনতাকে বোঝালেন দেশরক্ষায় তৃণমূল নেত্রী মমতার উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা। তাঁর কথা শেষ হতে না হতেই হাততালিতে ফেটে পড়ল জনতা। মঞ্চে তখন বসে পার্থ চ্যাটার্জি, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ব্রাত্য বসু, গৌতম দেব, নির্মল মাজিরা।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে শিল্পীদের কণ্ঠে কখনও গান, কখনও বা আবৃত্তি শোনা যাচ্ছিল। সুগায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন দরাজ গলায় গাইছিলেন মমতারই লেখা ও সুর করা, ‘আজ কাল পরশু...’ গানটি। রবীন্দ্রগানও তাঁর কণ্ঠে মুগ্ধ করছিল ভিড়কে। শুধু তিনিই নন, গান গেয়েছেন দোলা সেনও। সলিল চৌধুরির পুরনো গানগুলিকে এদিন মনে করিয়ে দিচ্ছিল দোলার কণ্ঠ।
মমতার ধর্নার দ্বিতীয় দিনে চোখে পড়ল আরও অনেকের সঙ্গে টলিউডের রুপোলি পর্দার শিল্পীদের। এঁদের কেউ গান গাইলেন, কেউ বা শোনালেন আবৃত্তি। সকালেই এদিন এসেছিলেন নাট্যাভিনেত্রী শাঁওলী মিত্র। মঞ্চে মমতার পাশেই সারাক্ষণ বসেছিলেন ইন্দ্রাণী হালদার ও নয়না দাস। সন্ধেয় এলেন অভিনেতা–পরিচালক অরিন্দম শীল। রাজনীতির বাইরে এই পরিবৃত্তে স্বচ্ছন্দ ছিলেন তাঁরাও। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জমানায় কেন্দ্রীয় সরকারের তুঘলকি বেশ কিছু ফতোয়ায় আজ আক্রান্ত হতে হচ্ছে কলাকুশলী–শিল্পীদেরও। ছোট ছোট নাট্যগোষ্ঠীর গ্রান্ট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে দেশ জুড়ে অস্থির রাজনৈতিক বাতাবরণ সৃষ্টির বিরুদ্ধেও জনমত গঠনে মমতার সঙ্গী হয়েছেন এঁরা।