মঙ্গলবারই বিধানসভায় আগামী অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসের বাজেট পাশ করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সেইসঙ্গে ও’দিন ঋণের বোঝা বৃদ্ধি নিয়ে বিরোধীদের আনা যাবতীয় অভিযোগকেও খণ্ডন করলেন অর্থমন্ত্রী। বিধানসভায় জবাবি ভাষণে তিনি বলেন, মোট ঋণের পরিমাণ কত, সেটা বড় ব্যাপার নয়। জিডিপি বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের তুলনায় ঋণের হার কত, সেটাই সব জায়গায় দেখা হয়। এ রাজ্যে সেই হার কমছে বলে তিনি জানিয়েছেন। জানা গেছে, বামফ্রন্ট সরকারের সময় এই হার ছিল ৪০.৬৭ শতাংশ। আর এই ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরে তা কমে হয়েছে ৩৩.৯ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের সব রাজ্যের মধ্যে বাংলার গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার সব থেকে বেশি। সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অর্গানাইজেশনের পরিসংখ্যান থেকেই এই তথ্য মিলেছে, জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
রাজ্যের বক্তব্য, বাম সরকারের আমলের বিপুল ঋণের দায় নিতে হচ্ছে তাঁদের। যে টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, তার সিংহভাগই ব্যবহার হচ্ছে বাম সরকারের আমলে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে। বাজেট পুস্তিকার পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরে রাজ্য বাজার থেকে ৪৭ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। গত বছর বাজেট পেশ করার সময় বাজার থেকে ৪৩ হাজার ৯৪৮ কোটি ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সরকারের দাবি, জিডিপি বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ার কারণে ঋণের পরিমাণ বাড়লেও রাজ্য সরকারের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ অনেক বাড়ানো হয়েছে। ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। ২০১৯-’২০ আর্থিক বছরে তা ১৩.২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ৩৮ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪১ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। রাস্তাঘাট, সেতু প্রভৃতি পরিকাঠামো নির্মাণে খরচ ৭ হাজার ৭৬০ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা।
তিনি এ-ও জানান যে, মুখ্যমন্ত্রী যে কৃষকবন্ধু প্রকল্প চালু করেছেন, তার জন্য চলতি আর্থিক বছরে চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী আর্থিক বছরে এর জন্য তিন হাজার কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে আরও অর্থ দিতে চলতি আর্থিক বছরেই অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব আনতে হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্যসাথী প্রকল্পে চাল সরবরাহের জন্য ১ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা, রাস্তা-সেতু নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা, প্রবীণদের পেনশনের জন্য ৮৭৫ কোটি টাকা প্রভৃতি রয়েছে।