শৈশবে বাবার হাত ধরে ফুটবল মাঠে পা রেখেছিল ছেলে। রেলকর্মী বাবার অনুপ্রেরণায় ফুটবল হয়ে ওঠে ধ্যানজ্ঞান। গ্রামীণ প্রতিযোগিতার আসর চলাকালীন বুকে ব্যথা নিয়ে ওই ফুটবলার ময়দানে লুটিয়ে পড়েন। মাঠেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় প্রতিভাবান, প্রতিষ্ঠিত ফুটবলারের। মৃতের নাম নিখিল টুডু (৩০)। ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার বাঁকুড়া-২ ব্লকের কেঁদবনী নামোপাড়া ফুটবল মাঠে।
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো গঙ্গাজলঘাটির করঞ্জড়া সংলগ্ন হাসপাহাড়ি গ্রামের নিখিল টুডু ছাত্রাবস্থা থেকেই এক জন ‘ভালো’ গোলকিপার হিসেবে পরিচিত। শালতোড়া কলেজ থেকে স্নাতক এই যুবক ফুটবলে নিজস্ব দল তৈরী করে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করত৷
পাশাপাশি বেশ কিছু দিন আগে গ্রাম সংলগ্ন করঞ্জড়া বাজারে ক্রীড়া সামগ্রীর দোকান দিয়েছিল। কিন্তু সেই খেলাপাগল যুবককে খেলার মাঠেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে একথা মেনে নিতে পারছেন না কেউই। সূত্রের খবর, শুক্রবার বিকেলে নিজের দল নিয়ে ঐ যুবক বাঁকুড়া-২ ব্লকের কেঁদবনী নামোপাড়া ফুটবল মাঠে এক প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়।
দলবল নিয়ে নিখিল ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। দুপুর নাগাদ মনসারামবাবু কেন্দবনী গ্রামের ফুটবল ময়দানে ছেলের খেলা দেখতে হাজির হন। বিকেলে খেলা চলাকালীন নিখিল হঠাৎ অসুস্থ বোধ করেন। বুকে হাত দিয়ে তিনি মাঠে বসে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যে সংজ্ঞা হারিয়ে ওই যুবক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে অমরকানন গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের অনুমান। গঙ্গাজলঘাটি থানার পুলিস একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে শনিবার বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে থানার আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
এদিন মেডিক্যালের মর্গে দাঁড়িয়ে মৃতের দাদা চিত্তরঞ্জন টুডু বলেন, ভাই বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। ছোট থেকেই ভাইকে বাবা উৎসাহ জোগাত। বছর দুয়েক হল বাবা অণ্ডাল থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তারপর থেকে বাড়ির কাছকাছি প্রতিযোগিতা আয়োজিত হলে বাবা ভাইয়ের খেলা দেখতে যেত। শনিবার বাবার সঙ্গে আমিও কেন্দবনীর নামোপাড়া
ফুটবল ময়দানে গ্রামের দলের খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। খেলার মাঠে হঠাৎ ভাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রথমে বুকে যন্ত্রণায় কিছুক্ষণ কাতরাতে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ভাইয়ের মৃত্যু হয়। ফুটবলের প্রতি নেশার টানে নিখিল মাস ছয়েক আগে পাশের করণজোড়া গ্রামে খেলার সামগ্রীর দোকানও খোলে।
সহ খেলোয়াড় তথা মৃত যুবকের বাল্যবন্ধু বাপন বাউরি বলেন, নিখিলকে টপকে প্রতিপক্ষ দলের বল গোল পোস্টে পৌঁছতে পারত না। টইব্রেকার পর্যন্ত খেলা গড়ালে নিখিলের জন্য আমরা চাপমুক্ত অবস্থায় থাকতাম। গোল পোস্টের সামনে নিখিল কার্যত প্রাচীরের মতো থাকত। ঠিকমতো প্রশিক্ষণ পেলে নিখিল আরও বড় জায়গায় যেত।