গান্ধীজির প্রয়াণ দিবসকে ‘শহীদ দিবস’ হিসাবে পালন করল অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। আর সেটা করতে গিয়ে যা করলেন দলের নেত্রী তাকে এককথায় কুকীর্তি ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না। গান্ধীজির ছবি লাগানো কুশপুতুলে বন্দুক দেগে সেই হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি রোমন্থন করলেন তাঁরা। নাথুরাম গডসে যে তাঁদের কাছে ‘শহীদ গডসে’ সেটাও প্রমাণের মরিয়া চেষ্টা চালালনে হিন্দু মহাসভার নেতা-নেত্রীরা। অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার জাতীয় সম্পাদক পূজা শকুন পাণ্ডে গান্ধীজির সেই হত্যাকান্ডকে আবার নতুন করে মনে করিয়ে দিলেন দেশের কাছে।
শুধু অভিনয় করে দেখানো নয়, নাথুরাম গডসের মূর্তিতে মালাও দেন হিন্দু মহাসভার সদস্যরা। চলে মিষ্টিমুখও। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও ভাইরালও হয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হিন্দু মহাসভার ন্যাশানাল সেক্রেটারি পূজা শকুন পাণ্ডে একটি নকল বন্দুক নিয়ে মহাত্মা গান্ধীর কুশপুতুলে গুলি করছেন। গুলি করার সঙ্গে সঙ্গেই কুশপুতুলের মধ্যে থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। আর এই পুরো ঘটনার সময় উল্লাসে ফেটে পড়ছেন উপস্থিত সদস্যরা।
পরে সাংবাদিকদের পূজা জানান, যেভাবে দশেরাতে রাবণ বধ হয়, সেভাবেই প্রত্যেক বছর এই বিশেষ দিনে তাঁরা এই হত্যাকান্ড অভিনয় করে দেখাবেন। এই বিশেষ দিনকে ‘শৌর্য দিবস’ হিসাবেও উল্লেখ করেছে হিন্দু মহাসভা।
অবশ্য দক্ষিণপন্থী সংগঠনের এই ধরণের কাণ্ড এটাই প্রথমবার নয়। ২০১৫ সালে হিন্দু মহাসভার নেতা স্বামী প্রণবানন্দ ঘোষণা করেছিলেন, কর্নাটকের ছ’টি জেলায় নাথুরাম গডসের মূর্তি তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। এমনকী বিনায়ক দামোদর সাভারকরের স্নেহধন্য নাথুরাম গডসেকে একজন দেশভক্ত হিসেবেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
হিন্দু মহাসভার এই ধরণের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অধিকাংশের বক্তব্য, এই অভিনয় করে দেখিয়ে আখেরে সবার ঘৃণার পাত্র হয়ে উঠছে এই সংগঠন। কেউ আবার বলেছেন, যাকে গোটা দেশ হত্যাকারী বলে চেনে, তাকে দেশভক্তের আখ্যা দিয়ে সেনাবাহিনীর জওয়ানদের অসম্মান জানিয়েছেন এই সংগঠনের সদস্যরা। যদি এতই দেশভক্তি থাকে, তাহলে বর্ডারে গিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করারও প্রস্তাবও দিয়েছেন কেউ কেউ।
১৯১৫ সালে মদনমোহন মালব্য এই হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন নাথুরাম গডসে। দিল্লির বিড়লা হাউসে সন্ধ্যের প্রার্থনা করার সময় তাঁর হাতে খুন হন মহাত্মা গান্ধী। ১৯৪৯ সালের ৮ নভেম্বর তাঁকে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়। ১৫ নভেম্বর অম্বালা জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়ে গডসেকে।