শনিবারের ঐতিহাসিক ব্রিগেডে বিজেপিকে তুলোধোনা করার পাশাপাশি ইভিএম নিয়েও সুর চড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সুরেই সুর মিলিয়েছিলেন ফারুক আবদুল্লা-সহ সকল বিরোধী নেতাই। গতকাল প্রমাণ হয়ে গেল, তাঁরা যে অভিযোগ করেছিলেন সেটাই সত্যি। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে গোপন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএমে কারচুপি করা হয়েছিল। হ্যাক করা হয়েছিল ভোটিং মেশিন। সাহায্য নেওয়া হয়েছিল ট্রান্সমিটারের। সোমবার লন্ডনে এক সাংবাদিক বৈঠকে এই বিস্ফোরক দাবি করলেন মার্কিন সাইবার বিশেষজ্ঞ সৈয়দ সুজা।
যদিও সেই ঘটনার কথা এখন প্রমাণ করতে পারবেন না মার্কিন হ্যাকারটি। কারণ সেই ঘটনার কথা জানতেন বিজেপি নেতা গোপীনাথ মুণ্ডে। প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার গোপন ঘটনা জেনে যাওয়াতেই খুন করা হয়েছিল গোপীনাথকে। তাই সাংবাদিক বৈঠকে ভিডিও কলের মাধ্যমে মুখ গোপন রেখে সৈয়দ জানান, যে বিশেষজ্ঞ দলটি ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এবং পরবর্তীকালে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাটের বিধানসভা ভোটে ভারতের নির্বাচন কমিশনকে ইভিএম সরবরাহ করেছিল, ব্যবহার করা হয়েছিল, সেগুলি তৈরির সময়ে তিনি যুক্ত ছিলেন। সেই সংস্থায় তখন কাজ করতেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৬ মে মোদী সরকারের পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন গোপীনাথ মুন্ডে। এক সপ্তাহ পরেই, ৩ জুন নয়াদিল্লির কাছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। সুজার দাবি, ‘এটি দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত খুন। ইভিএমে কারচুপির ঘটনা ফাঁস করার কথা ভাবছিলেন গোপীনাথ। সেই কারণেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।’ শুধু গোপীনাথ নয়, সৈয়দ সুজার কাছ থেকে ইভিএম দুর্নীতির বিষয়টি জেনেছিলেন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ। তিনিও বিষয়টি ফাঁস করে দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। সেই রিপোর্ট প্রকাশের আগেই অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল তাঁর দেহ। এই হত্যাও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন এই মার্কিন সাইবার বিশেষজ্ঞ।
লন্ডনে আয়োজিত ‘ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর ওই সাংবাদিক বৈঠকে সুজার অভিযোগ, সত্যি চেপে রাখতে চাননি বলেই শেষ কয়েকদিন ধরে তাঁকে হত্যা করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তিনি সত্যি কথাটা বলতে চেয়েছেন বলেই আজ সাংবাদিকদের সব জানিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, যে কোনও ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব। প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ব্যবহার করা ইভিএম কীভাবে হ্যাক করতে হয়, সেটাও দেখান সৈয়দ। ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বালও।
তবে এই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৭ সালে আপ বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ দেখিয়েছিলেন, কীভাবে ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব। সেই সময়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে দাবি করা হয়েছিল, ভারতে যে ইভিএম ব্যবহার করা হয়, তা নাকি কিছুতেই হ্যাক করা সম্ভব নয়। যদিও, গতকালের সাংবাদিক বৈঠক নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএমের উপর প্রশ্ন তুলে দিল। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব বিরোধীরা। সকলেরই দাবি ২০১৪-য় ইভিএম হ্যাক করাই ছিল আসল মোদী ম্যাজিক। ইভিএম দুর্নীতির খবর সামনে আসার পর টুইট করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতাও। গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বিরোধী দলগুলির তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে পুরো বিষয়টি তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।