জাতীয় রাজনিতিতে বরাবরই সক্রিয় ভূমিকা ছিল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দীর্ঘসময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বের পদ সামলেছেন। দিল্লীর রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থেকেছেন। কিন্তু সেই প্রাসঙ্গিকতা ছিল একজন গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক নেত্রী হিসাবেই। এর আগে কখনও জাতীয় স্তরের নেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেনি দেশের রাজনৈতিক শিবির। ব্রিগেডের সমাবেশ বুঝিয়ে দিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন জাতীয় রাজনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক।
তৃণমূলের বিগ্রেড জনসমাবেশের রাজনৈতিক নাম ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’ অর্থাৎ ‘এক ভারত’৷ এই মঞ্চ থেকেই কেন্দ্রের বিজেপি ও এনডিএ সরকার বিরোধী অবস্থান নিয়ে প্রবল প্রতিরোধের বার্তা দিয়েছেন তাবড় তাবড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব৷ কে নেই এই তালিকায়৷ ফারুখ আবদুল্লা থেকে অখিলেশ যাদব৷ স্ট্যালিন-কুমারস্বামী থেকে গেগাং আপাং এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়া৷ উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম চারদিক মিশে গেল মমতার ব্রিগেডে৷
দেবেগৌড়া, শরদ পওয়ার, ফারুখ আবদুল্লা, শরদ যাদব, চন্দ্রবাবু নায়ডুদের মতো বর্ষীয়াণ এবং পোড় খাওয়া রাজনীতিকরা নিজেদের ভাষণে দ্বিধাহীন ভাবে মান্যতা দিয়ে দিলেন বিরোধী রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অগ্রগণ্য অবস্থানকে। কেউ বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই বিরোধী ঐক্যের এই চোখ ধাঁধানো প্রদর্শনী সম্ভব হল। কেউ আবার অকপটে কৃতজ্ঞতা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব, জয়ন্ত সিংহ, জিগ্নেশ মেবাণী, হার্দিক পটেলদের মতো তরুণরা আরও একধাপ এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের প্রতি নিজেদের আস্থার কথা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন ব্রিগেড থেকে।
দোর্দণ্ডপ্রতাপ নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের দিকে নিরন্তর চ্যালেঞ্জ ছোড়ার স্পর্ধা দেখাতে পারেন যিনি, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গোটা বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরকেই যে তিনি পথ দেখাতে পারেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে আর কোনও মতপার্থক্য নেই। ব্রিগেড সমাবেশ বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, ভারতের নানা প্রান্ত থেকে কলকাতায় আসা রাজনীতিকরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখন জাতীয় রাজনীতির অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবেই দেখেন। পটনা সাহিবের বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা তো দিন দুয়েক আগে খোলাখুলিই বলেছিলেন – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর আঞ্চলিক নেত্রী নন, তিনি এখন জাতীয় নেত্রী। কিন্তু জাতীয় স্তরের নেত্রী হিসেবে মান্যতা পাওয়ার পথে মমতার সবচেয়ে বড় সাফল্য সম্ভবত কংগ্রেসকে নমনীয় হতে বাধ্য করা। বলতে বাধ্য করা, ‘মন মিলুক, না মিলুক, হাত আমাদের মেলাতেই হবে’।
রাহুলের প্রধানমন্ত্রিত্বের যাবতীয় প্রস্তাবনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার পত্রপাঠ খারিজ করেছেন। তার পরেও রাহুল গান্ধীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে প্রতিনিধি পাঠানোয় প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মতের মিল হোক বা না হোক, তাঁকে অবজ্ঞা করার জায়গায় এখন কংগ্রেসও নেই। খাড়্গে এবং সিঙ্ঘভিকে মঞ্চে বসিয়ে রেখে মমতা এ দিন বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, ভোটের পরে ঠিক করব।’ সভামঞ্চ থেকে তো নয়ই, সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলন থেকেও খাড়্গেরা সে কথার কোনও স্পষ্ট বিরোধিতা করেননি। উচ্চারিত হয়নি, কিন্তু স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে দেওয়ালের লিখন।