৩৫ লক্ষ মানুষের সমাগম নিয়ে গঙ্গাসাগর মেলা হয়ে উঠল একখণ্ড ভারত। এক লহমায় গঙ্গা ও সাগরের জলে মিশে গেল প্রদেশ, ভাষা, বর্ণ, উচ্চনীচ জাতপাত, ধনী, গরিব, নেতা, নেত্রী, সাধুসন্ত, সাধকের ভেদাভেদ। মহামানবের মিলনস্থল তৈরি হয়ে গেল পুরো সাগরতট। বেলা যত বেড়েছে, ভিড়ও বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সকাল থেকে শুধু মানুষ আর মানুষ। মেলায় সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘’এই মেলা দেশের সেরা মেলা হতে চলেছে। প্লাস্টিকমুক্ত এই মেলা নির্মল মেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এমনকী মেলা এখন বিপন্মুক্ত”। সাগরস্নান করেছেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও অরূপ বিশ্বাস।
মেলার সূচনা থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩৫ লাখ পুণ্যার্থী স্নানে এসেছেন বলে এদিন মেলা অফিসে বসে সাংবাদিক সম্মেলেন দাবি করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যা গতবারের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে মন্ত্রীর দাবি। এরমধ্যে স্নান সেরে ২৪ লাখ মানুষ বেরিয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, বহু মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। সকলেই মেলার ব্যবস্থপনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সারক্ষণ পানীয় জল, অসংখ্য শৌচাগার, পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশংসা করে গিয়েছেন। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, “জেলাশাসকের টিম, সুন্দরবন জেলা পুলিসের টিম, সাগরের বিধায়কের টিম, পরিবহণ, জনস্বাস্থ্য, পূর্ত, স্বাস্থ্য, বিপর্যয় মোকাবিলা, উপকূল রক্ষী বাহিনী ছাড়াও একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিলিতভাবে দিনরাত পরিশ্রম করেছে মেলাকে সর্বাঙ্গসুন্দর করার জন্য। সেই কারণে পুণ্যার্থীদের সেবার পাশাপাশি এত বড় সর্বভারতীয় মেলায় কোনও অঘটন ঘটেনি।”
লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড়ের জন্য সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে এই সাগরতট। কেবলমাত্র একটা ডুব দিলেই মিলবে পুণ্য। সেই অবিচল বিশ্বাসে ভর করে সুপ্রাচীন সময় থেকে পুণ্যার্থীরা সুন্দরবনের এই দ্বীপে চলে আসেন। সকালে ঠান্ডা ও উত্তুরে হাওয়ার কামড় কম থাকায় পুণ্যার্থীদের স্নান করতে খুব কষ্টও হয়নি। স্নান করার আগে তটজুড়ে সূর্য প্রণামের জন্য ফুল দিয়ে, ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি করে নিয়েছেন।
সাগরে আসার দুর্গম সেই যাত্রাপথ আজ অনেকটাই মসৃণ। পুণ্যার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। কাকদ্বীপের লট নং আটে পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের জন্য তদারকি করছেন ৩ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও মন্টুরাম পাখিরা। ১৭ জানুয়ারি মেলা শেষ পর্যন্ত থাকবেন তাঁরা।