বিদ্যালয়ে শিক্ষক সমস্যা মেটাতে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা পড়ুয়াদের দিয়ে শিক্ষকতায় ইন্টার্নশিপ করানোর সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। সোমবার নবান্নে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রাথমিক স্তরে ইন্টার্ন শিক্ষকদের দু’হাজার ও মাধ্যমিক স্তরে আড়াই হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হবে। শিক্ষার ব্যাপ্তি আরও বৃদ্ধি করতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আজ সোমবার দুপুর দুটো নাগাদ নবান্নে ৩০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও দফতরের আধিকারিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খুব ভাল বৈঠক হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার ব্যাপারে আলোচনা করেছি আমরা’। শিক্ষক সমস্যা মেটানোই মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘রাজ্যে শিক্ষার ব্যাপ্তি বাড়ছে৷ জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে৷ সেখানে কী পড়ানো হবে, কীভাবে চলবে বিশ্ববিদ্যালয় তাতে সাহায্য করবে ঐতিহ্যশালী, নামজাদা বিশ্ব বিদ্যালয়গুলি’৷
কন্যাশ্রীর জন্য ছাত্রী সংখ্যা বেড়েছে জানিয়ে মমতা বলেন, ‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের সংখ্যা বেড়ে ১২ লাখ থেকে ২০ লাখে গিয়ে পৌঁছেছে। যা আমাদের গর্বের বিষয়। এছাড়াও স্কুলে বাড়ছে ছাত্রীর সংখ্যা। আগে ছিল পাঁচ লক্ষের কিছু বেশি, এখন সেটা ৯ লক্ষ ছাড়িয়েছে। উচ্চশিক্ষায় মেয়েরা যাতে আরও এগিয়ে আসতে পারে তার ভাবনাচিন্তাও করা হচ্ছে’। এদিন বৈঠকে একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের আধিকারিক, উপাচার্য সহ–আরও দু’জন থাকবেন। শিক্ষা বিষয়ক নানা বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন। শিক্ষক-শিক্ষিকা যেখানে বেশি আর যেখানে কম তার মধ্যে সমন্বয়সাধন করবে এই কমিটি। রাজবংশী, অলচিকি ভাষা উচ্চশিক্ষায় আরও ভালভাবে যুক্ত করার কাজ চলছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নানা কারণে শিক্ষক নিয়োগ ও তাঁর সমবন্টনে অনেক সমস্যা দেখা যায়। রাজ্যের সর্বত্র যাতে সমভাবে শিক্ষকদের ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তা দেখার কথাও বলেন তিনি। এছাড়াও, পঞ্চম শ্রেণীকে মাধ্যমিক বিভাগ থেকে সরিয়ে প্রাথমিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। তাহলে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকদের উপর চাপ কিছুটা কমবে। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময়েই দেখা যায়, দূরের স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা তেমন বেশি না। তাই এবার থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে কেউ যদি শিক্ষকতা করতে চান, তাহলে নতুন সুযোগ হিসাবে ইন্টার্ন হয়ে কাজ করতে পারবেন তাঁরা। এর ফলে তাঁদের অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হবে, সার্টিফিকেট পাবেন তাঁরা। পরবর্তীতে শিক্ষকতার পেশায় গেলে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্যে ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল৷ তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর তা বেড়ে হয়েছে ২৮টি৷ প্রস্তাব আকারে রয়েছে আরও ১০টি৷ বেড়েছে প্রায় ৫০টি কলেজও৷ বাড়ানো হয়েছে কলেজের আসন সংখ্যা৷ স্কুল শিক্ষায় ভরতি ১৩ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ লক্ষ৷