অলোক বর্মাকে সরানো নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ। বিরোধীদের দিক থেকে ধেয়ে আসা সমালোচনার তিরে বিদ্ধ কেন্দ্র। তার ওপর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত অনৈতিক ও অসাংবিধানিক। এক জনকে পছন্দ হচ্ছে না বলে তাকে এ ভাবে সরিয়ে দেওয়া য়ায় না। সব লক্ষণরেখাকে ওরা অতিক্রম করে গিয়েছে।’ তাই অলোক বর্মাকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েও স্বস্তিতে নেই মোদী সরকার।
রাজনীতিবিদদের একাংশের ধারণা, পদ থেকে সরে গিয়েও নরেন্দ্র মোদীর মাথাব্যথা হয়ে উঠতে চলেছেন অপসারিত সিবিআই অধিকর্তা। তাঁদের মতে, অলোক বর্মার অপসারণের মাধ্যমে মোদী সরকার তাদের আশু বিপদ কাটাতে পারে, কিন্তু বর্মাকে তাড়াহুড়ো করে সরানোর সিদ্ধান্তই লোকসভা নির্বাচনে মোদীর জন্য বুমেরাং হয়ে উঠতে চলেছে।
কী ভাবে? কংগ্রেসের অভিযোগ, বর্মা রাফাল চুক্তির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু করতে পারেন, এই আশঙ্কাতেই তাঁকে সরানো হল। যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরিদের অভিযোগের ভিত্তিতে বর্মা আদৌ রাফাল চুক্তি নিয়ে এফআইআরের নির্দেশ দিতেন কি না, তা তিনিই জানেন। কিন্তু সিবিআই অধিকর্তাকে এ ভাবে সরানোয় আমজনতা সন্দেহ করবেন, তদন্তের ভয়েই মোদীর এই ‘বর্মা হঠাও’ অভিযান। বিশেষত, মোদী নিজে যে ভাবে তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে বর্মাকে সরালেন, তা থেকে প্রমাণ হয় সরকার অনেক কিছু গোপন করতে চাইছে।
সেই সন্দেহ উসকে দিতে গতকাল কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, মোদীর মনে ভয় গেড়ে বসেছে। তিনি ঘুমোতে পারছেন না। তাই সিবিআই অধিকর্তার পদ থেকে পর পর দু’বার বর্মাকে হঠিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে এই সন্দেহ তৈরির কাজটাই করেছিলেন তদানীন্তন সিএজি বিনোদ রাই। টুজি স্পেকট্রাম বণ্টনে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির হিসেব-সহ কয়লা খনি বণ্টন, কমনওয়েলথ গেমসের মতো একাধিক বিষয়ে বিরূপ রিপোর্ট দেন তিনি। মনমোহন সরকারে বিরুদ্ধে দুর্নীতির সন্দেহের চারা তিনিই পুঁতে দেন। বিরোধীদের অঙ্ক, মোদী সরকারের জন্য ঠিক এই কাজটিই করবেন অলোক বর্মা।
তবে শুধু বর্মাই নন। রঘুরাম রাজন, উর্জিত প্যাটেল বা যখনই যিনি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁকেই সরানো হয়েছে। এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির অভিযোগ, ‘সিবিআই অধিকর্তাকে সরাতে মোদী সরকার ভিজিল্যান্স কমিশনার কে ভি চৌধুরির দফতরকে কাজে লাগিয়েছে। সিভিসির অভিযোগের জবাবে বর্মার বক্তব্যটুকুও শোনা হয়নি।’ সকল বিরোধীদেরই অভিযোগ, মোদী সরকার সিবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে।