৭০ দশকের গোড়ার দিক। গিটার, ড্রামসের সঙ্গে তখনও বিশেষ পরিচয় হয়নি মধ্যবিত্ত বাঙালির। গান বলতে তখন হেমন্ত-মান্না। আর সংস্কৃতির নাম রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যা। এমনই এক সাংস্কৃতিক আবহে ড্রামস-গিটারের দাপাদাপি শুরু হয়েছিল নাকতলা অঞ্চলের এক বাড়িতে। তবে তা কোনও ভদ্দরলোকের সময়ে নয়। মধ্যরাতে। এক দিন নয়, দিনের পর দিন। শেষে অমন অত্যাচারে তিতিবিরক্ত হয়েই এক প্রতিবেশী সেই বাড়ির পাঁচিলে লিখে দিয়েছিলেন ‘আস্তাবল’।
এর কিছু দিন পরে ওই আস্তাবল থেকেই আধুনিক বাংলা গানের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছিলেন একটা মানুষ। ৭০ থেকে ৯০-এর দশক শাসন করেছিল তাঁর ইন্ডিপেন্ডেট মিউজিক। আর ক্রমশই গৌতম চট্টোপাধ্যায় নামের সেই মানুষটি হয়ে ওঠে আস্ত একটা প্রজন্মের বাংলা গানের নতুন ‘আইকন’। তথাকথিত বিপ্লবের প্রতি অনাগ্রহ থেকে সঙ্গীতকেই হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন যিনি। বলা যায়, গৌতম চট্টোপাধ্যায় ওরফে ‘মণিদা’র দেখানো রাস্তাতেই আজও হাঁটছেন বাংলার বর্তমান সঙ্গীতশিল্পীরা। এ বার তাঁরই বায়োপিক তৈরি হতে চলেছে টলিউডে। যা পরিচালনা করবেন আরেক স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী ও পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।
গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের মতো বহুমুখী প্রতিভাকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা সহজ নয়। গীত রচনা, গানের সুর করা, গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি যুক্ত ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর পরিচালিত নাগমতী ছবিটির জন্য তিনি জাতীয় পুরষ্কারও পান তিনি। দক্ষ সংগঠক বলে পরিচিত গৌতমের সঙ্গে যোগ ছিল নকশাল আন্দোলনেরও। জানা গেছে, তাঁর চরিত্রের সব পরতই থাকবে এই বায়োপিকে। শিল্পীর কর্মজীবন, রাজনীতি থেকে ব্যক্তিগত সবটাই ধরা হবে ছবিতে।
অনিন্দ্যর এটি চতুর্থ ছবি। পরিচালকের আগের তিনটি ছবিই আলাদা স্বাদের। সে দিক থেকে গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের বায়োপিকও আলাদা ঘরানার ছবি হতে যাচ্ছে। অনিন্দ্যর নিজের সঙ্গীত জীবনেও গৌতমের অনুপ্রেরণা রয়েছে। আবার গৌতম চট্টোপাধ্যায় মানেই ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। এবং সেই সঙ্গে জুড়ে যায় আব্রাহাম মজুমদার, প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জন ঘোষ-সহ একাধিক শিল্পীর নাম। ফলে প্রতিটি চরিত্রই যে হাজির থাকবে ছবিতে তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি ছবিতে মিউজিকও যে বিরাট একটা অংশ জুড়ে থাকবে, তাও নিশ্চিত। জানা গাছে, এ জন্য গৌতনের সবকটি গানের স্বত্ব পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
তবে গৌতমের চরিত্রে কাকে দেখা যাবে, তা এখনও খোলসা করেননি অনিন্দ্য। তবে জানা গেছে, মুখ্য ভূমিকায় কাকে নেওয়া হবে তা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি তিনি। তবে যিনিই করুন, মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টের ব্যবহারে তাঁর দখল থাকতে হবে। পরিচালক তাঁর প্রতিটি ছবিতেই নতুন মুখ নিয়েছেন। তাই এ ছবিতেও নতুন কাউকে দেখা যেতে পারে বলে ধারণা। প্রসঙ্গত, ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ এবং ‘মনোজদের অদ্ভুতবাড়ি’ শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের প্রযোজনা সংস্থা থেকে করলেও এই ছবির জন্য অনিন্দ্য গাঁটছড়া বেঁধেছেন ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের সঙ্গে। আপাতত চলছে চিত্রনাট্য লেখার কাজ। আশা করা যাচ্ছে, এ বছরেই সিনেমার পর্দায় হাজির হবে মহীনের লম্বা রেসের ঘোড়া।