মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই বলে থাকেন ‘এগিয়ে বাংলা’। তাঁর দাবি যে একেবারেই নির্ভুল, সে ইঙ্গিত মিলেছে কেন্দ্রীয় রিপোর্টেও। কিছুদিন আগে খোদ বিশ্বব্যাঙ্ক জানিয়েছিল পঞ্চায়েত পরিচালনা ও গ্রামোন্নয়নে বাংলাই গোটা দেশের মুখ। আর এবার জাতীয় তফশিলি জাতি কমিশনের দাবি, অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়নের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় বিকাশের পথে সারা দেশের রোল মডেল হবে বাংলাই। মমতার রাজ্যই যে অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়নে অন্য রাজ্যগুলিকে দিশা দেখাবে, কমিশনের রাজ্য স্তরে সর্বশেষ পর্যালোচনা বৈঠকে সেই ইঙ্গিতই দেওয়া হয়েছে।
ওই বৈঠকের আলোচ্যসূচি অনুযায়ী, ‘কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রামশঙ্কর কাঠেরিয়া বৈঠকের সমাপ্তিপর্বে বাংলার অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরের কর্তাদের প্রান্তিক মানুষদের সামাজিক অগ্রগতির কাজে নানা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন। সামাজিক ন্যায়ের বিকাশে এই রাজ্য দেশকে নেতৃত্ব দেবে বলেই আশা ব্যক্ত করেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি এমন আশাও পোষণ করেন যে বাংলা এই ক্ষেত্রে অন্য রাজ্যগুলির ‘রোল মডেল’-এর ভূমিকা নেবে। এই বৈঠকে রাজ্যের তরফে অংশ নিয়েছিলেন মুখ্যসচিব, অনগ্রসর শ্রেণি সচিব-সহ শীর্ষ আধিকারিকেরা।
যে বিষয়গুলিতে বাংলা নজর কেড়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল সরকারি চাকরিতে তফশিলি জাতিভুক্তদের নিয়োগে রাজ্যের প্রয়াস। পর্যালোচনা বৈঠকে এই বিষয়ে অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরে অফিসারেরা কমিশনকে জানান, রাজ্যে সরকারি চাকরিতে ২২ শতাংশ পদ তফশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত। এ ক্ষেত্রে সরকারি বিধি অনুযায়ী, তাঁদের চাকরিতে পদোন্নতির জন্য ৫০ পয়েন্ট রস্টার ও সরাসরি নিয়োগের জন্য ১০০ পয়েন্ট রস্টার মেনেই এগনো হয়। পাশাপাশি, রাজ্য সরকার তফশিলি জাতি-উপজাতি ও ওবিসিদের জন্য বিশেষ নিয়োগও চালায়। এর ফলে সরকারি চাকরিতে তপশিলি জাতিভুক্তদের নিয়োগের হার ১৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
বাংলার জন্য কমিশন সর্বশেষ পর্যালোচনা বৈঠকটি করেছে ২০১৭ এর অক্টোবরে। তফশিলি জাতিভুক্তদের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও মমতা সরকার যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তা পর্যালোচনা বৈঠকে রাজ্যের তরফে পেশ করা পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। যেমন, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে রাজ্যে উপকৃত তালিকায় রয়েছেন ২৬.৫৩ শতাংশ তপশিলি জাতিভুক্ত। যা সরকারি সংরক্ষণ সীমা অর্থাৎ ২২ শতাংশও ছাপিয়ে যায়। ওই বৈঠকে কমিশনের তরফে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, বিনামূল্যে উদ্বৃত্ত জমি বিতরণ প্রকল্পে রাজ্য কতটা এগোল বা আদতে ওই তফশিলি জাতিভূক্তদের হাতে পৌঁছেছে তো? এই ব্যাপারে রাজ্যের অফিসাররা কমিশনকে আশ্বস্ত করেছেন যে, বিতরণ করা জমির ১০০ শতাংশই তফশিলিরা পেয়েছেন।