ইংরেজি বছরের প্রথম দিনে সারা শহর জুড়েই ছিল উৎসবের আবহ। কল্পতরু উৎসবের জন্য প্রতি বছরেই ১লা জানুয়ারি বেশ ভিড় হয় দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে এই ঘটনার সাথে এবার যোগ হল নতুন চালু হওয়া দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াকে সেলফি তোলার হিড়িক।
গতকাল প্রায় সারাদিন ধরেই স্কাইওয়াকে মানুষের সেলফি তোলার দৃশ্য চোখে পড়েছে। শুধু শ্রীরামকৃষ্ণের ছবির সামনে বলে নয়, বিশ্ববাংলার লোগো দেওয়া ছবির সামনে, এসকালেটরে করে স্কাইওয়াকে ওঠার সময়, স্কাইওয়াকের ভিতর দিয়ে হাঁটার পথে রীতিমতো সেলফি তোলার প্রতিযোগিতা চলে। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াকের উপর শ্রীরামকৃষ্ণের ছবির পাশে দাঁড়িয়ে টপাটপ সেলফি তুলছিলেন কল্যাণীর বাসিন্দা শরদিন্দু মণ্ডল। তবে, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে সেখানে ওই দম্পতি ছবি তুলতে পারেননি। যুবক-যুবতীদের সেলফি তোলার হিড়িকে তাঁদের ছন্দপতন ঘটে। তিনি জানিয়েছেন, ‘এই প্রথম নিজের চোখে স্কাইওয়াক দেখলাম। খুব সুন্দর হয়েছে। তাই এখানে এসে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সেলফি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না।’
অস্থায়ী দোকানে পুজোর ডালা নিয়ে বসেছিলেন অনেকেই। অটো, টোটো করে আসা ভক্তদের হাত ধরে সেখানে ব্যবসায়ীদের মোটামুটি বেচাকেনা হয়েছে। এছাড়া মন্দিরের ঠিক বাইরে ফাঁড়ির পাশে মোবাইল, ব্যাগ রাখার জন্য ভক্তদের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে। স্নানের ঘাটে ভক্তদের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। মন্দিরের ভিতরে ঢোকার মুখে একাধিক বাঁশের ব্যারিকেড করা হয়েছিল। ভক্তদের সেই ব্যারিকেডের ভিতর দিয়ে গিয়ে মন্দিরে পুজো দিতে হয়েছে।
ভোর থেকে মায়ের কাছে পুজো দেওয়ার জন্য মন্দিরের গেট খুলে দেওয়া হয়। মন্দিরের অছি পরিষদের সম্পাদক কুশল চৌধুরি জানিয়েছেন, ‘লক্ষাধিক ভক্ত সমাগম হয়েছিল মন্দিরে। প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন ছিল তাই কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দক্ষিণেশ্বর স্টেশনের মুখে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। সেখানে দড়ি দিয়ে ভক্তদের আটকে দফায় দফায় ছাড়া হচ্ছিল। কোনও যানবাহন মন্দিরের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ফলে, মন্দির থেকে বেশ কিছুটা দূরে একাধিক অস্থায়ী স্ট্যান্ডে গাড়ি রেখে অটো, টোটো করে ভক্তরা কলেজ রোড ধরে পুরনো পথে মন্দিরে গেছেন।
মঙ্গলবার কল্পতরু উৎসবের জন্য স্কাইওয়াক প্রকল্প ওয়ানওয়ে করে দেওয়া হয়েছিল। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ভবতারিণীর কাছে পুজো দেওয়ার পর এদিন ভক্তদের স্কাইওয়াক দিয়ে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্পতরু উৎসব উপলক্ষে ভোর চারটে নাগাদ মঙ্গলারতি দিয়ে পুজোর সূচনা হয়। সারাদিন জুড়ে নিয়মমাফিক পুজোর পাশাপাশি এদিন বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরে কল্পতরু উৎসব উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় আরতি হয়।
এমনিতেই বর্তমান সময়ে প্রায় সব মানুষের মধ্যেই সেলফি-প্রীতি দেখা যায় আর গতকাল দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এই প্রকল্প ভক্তদের কাছে বাড়তি অক্সিজেন হিসাবে কাজ করেছে।