এ এক অন্য লড়াইয়ের গল্প। পৃথিবীর সব বাধা যেখানে হার মানলো ইচ্ছে শক্তির কাছে। দেশে সুযোগ দেয়নি। ভূটানের হয়ে এএফসি কাপ খেলতে শ্রীলঙ্কা যাচ্ছে জলপাইগুড়ির সুরজ।
নাম সুরজ রসাইলি। বয়স ১৯। জলপাইগুড়ি ভানুনগড়ের বাসিন্দা। ক্লাস থ্রি-তে পড়ার সময় বাবা চন্দু রসাইলি আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান। তারপর সংসারে নেমে আসে চরম অন্ধকার। তবে হার মানেনি সুরজের মা মিনতি রসাইলি। সুরজের ফুটবল খেলার খরচের পাশাপাশি ৩ ছেলেকে বড় করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন। মানুষের বাড়ির এঁটো বাসন পরিষ্কার করে ভাঙা বাড়িতে থেকে শুরু হয় ছেলেদের বড় করার কাজ।
সুরজ জানিয়েছে, ছোট থেকে পাড়ায় ফুটবল খেলত সে। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় থেকেই ইস্টবেঙ্গলের জলপাইগুড়ি রাজগঞ্জ ফুটবল একাডেমিতে খেলত। এরপর ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ আইএফএ শিল্ডও খেলে এই তরুণ। সম্প্রতি শিলিগুড়িতে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচে লেফট উইংগারে তাঁর খেলা দেখে ভূটানের একটি ক্লাবের পছন্দ হয় তাঁকে। তারপর থিম্পু ট্রান্সপোর্ট ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের কর্তারা মার্চ মাসে তাঁকে ডেকে পাঠায়। এবার ভূটানের ট্রান্সপোর্ট ইউনাইটেড এর হয়েই এএফসি কাপ খেলতে কলম্বো যাবে সুরজ।
সুরজের ইচ্ছা, তিনি দেশের হয়ে খেলবেন। তিনি বলেন, “দেশের কোনও ক্লাব যদি তাঁকে নেয় তাহলেই মায়ের কষ্ট সার্থক হবে।”
সুরজের মা মিনতি রসাইলি জানান, “কয়েকদিনের জন্য ছেলে বাড়ি এসেছে। আজ আমি সত্যিই খুব খুশি। ছেলে আমার এএফসি কাপ খেলতে কমম্বো যাচ্ছে। ওর বাবা নিখোঁজ হয়ে যাবার পর আমরা এলআইসি থেকে কোনও চাকরি বা অন্য কোনও সাহায্য পাইনি। তাই আমাকে এদের বড় করতে মানুষের বাড়ির এঁটো বাসন পর্যন্ত পরিষ্কার করতে হয়েছে। তাতেও আমার কোনও আক্ষেপ নেই। শুধু একটাই আক্ষেপ রইল দেশের কোনও ক্লাব ছেলেকে খেলায় নিল না। তাই আমি হাতজোড় করে আবেদন করছি দেশের কোনও ক্লাব ওকে খেলায় নিক।”
(সংগৃহীত)