ডার্বি মানেই আবেগ, ডার্বি মানেই খেলার সময় দ্বিধাবিভক্ত বাংলা। দ্বন্দ্ব পরিবারে। দ্বন্দ্ব পাড়ায় পাড়ায়।
ছয় বনাম আটের লড়াই৷ কিন্তু এই দুটো দলের দ্বৈরথ ভারতীয় ফুটবলের এমন একটা লড়াই যা পয়েন্ট পরিসংখ্যানে মাপা যায় না। রবিবাসরীয় যুবভারতীতে মুখোমুখি ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান। বাঙালির চিরকালীন ম্যাচ ঘিরে পারদ চড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই শেষের পথে টিকিট।
সদস্য সমর্থকদের আবেগের স্রোত দেখে প্রথমবার ডার্বির ডাগ আউটে বসা ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ আলেজান্দ্রো বলছেন, তিনি এই আবহে এল ক্লাসিকো বা মাদ্রিদ ডার্বির উত্তাপ পাচ্ছেন। মাঠে উপস্থিত ৬৭ হাজার দর্শকের গরম নিশ্বাস কাঁধে নিয়ে আলেজান্দ্রো বলছেন, লাল হলুদ জনতার মুখে হাসি ফোটাতে জিততে চান।
তবে আই লিগের পয়েন্ট টেবিলে ওপরে ওঠার তাগিদের কথাও তাঁর মুখে। দলের এক নম্বর স্ট্রাইকার এনরিকে চোটের জন্য ছিটকে গেছেন। নবাগত স্প্যানিশ উইঙ্গার হাইমে স্যান্টোস কোলাডোকে সারপ্রাইজ় প্যাকেজ হিসেবে ব্যবহার করতে চান। ফর্মে থাকা জোবি জাস্টিন তাঁকে ভরসা দিচ্ছেন। রক্ষণে খিল এঁটে মোহনবাগান বধের ছক তৈরি করেছেন। তাই মাঝমাঠে কাশিমের পাশে অ্যাকোস্টাকে জুড়ে ডিকা হেনরির কাজটা কঠিন করার ভাবনা রয়েছে। দুই উইং দিয়ে লালরিনডিকা রালতে ও ব্র্যান্ডনকে রেখে মোহনবাগানের দুই সাইডব্যাক অরিজিৎ বাগুই, অভিষেক আম্বেদকরের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে চান আলেজান্দ্রো ।
রক্ষণে বোরখার পাশে নির্ভরতা দিয়েছেন সালাম রঞ্জন সিং। জাতীয় দলে নিয়মিত হলেও সালাম ক্লাবের জার্সিতে প্রথম পছন্দ নন। রবিবারের ডার্বি সালাম রঞ্জন সিংয়ের নিজেকে প্রমাণ করার ম্যাচ। চুলোভা ইস্টবেঙ্গলের সবচেয়ে ধারাবাহিক। অন্যদিকে মনোজ মহম্মদের সামনে নিজেকে প্রতিষ্ঠার নব্বই মিনিট। তাই রবিবারের বিকেলে ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা নামবেন যুবভারতীতে অনুষ্ঠিত ডার্বিতে তিন বছরের খরা দূর করতে।
অন্যদিকে মোহনবাগানে শেষ সময়ে সনি নর্ডি সরে দাঁড়িয়েছেন। হাইতিয়ান ফুটবলারের চোট বড় ধাক্কা হলেও শংকরলাল অনুমান করে বিকল্প ভেবে রেখেছিলেন। একবছর আগে ডার্বিতে ডিপান্ডা ডিকার গোলে জেতার পরে অলক্ষ্যে সনি নির্ভরতা ছেড়ে নতুন দল গড়ে ওঠার কথা বলেছিলেন মোহনবাগান কোচ। সবুজ মেরুন ডাগ আউটের হটসিটে বসে পরাজিত হননি তিনি। কিন্তু এবারের লড়াইটা একটু আলাদা। আট নম্বরে দাঁড়িয়ে থাকলেও অবস্থাটা ভালো হতে পারত বলেছেন। রবিবাসরীয় ডার্বি সেই আচ্ছে দিন শুরু করার ডাক। ডিপান্ডা ডিকার সঙ্গে হেনরি কিসিয়েক্কা রয়েছেন। যাঁরা সনি নর্ডির আড়ালে হারিয়ে না গিয়ে নির্ভরতা দিচ্ছেন। ইউটা ও ওমর মাঝমাঠে রয়েছেন ম্যাচের দখল নিতে। দেখনদারি নয়, কাজের ফুটবল খেলে দলের রক্ষণের যাবতীয় খামতি ঢাকছেন।
নর্ডি জানিয়েছেন, খেলতে না পারার জন্য তাঁর খারাপ লাগছে। তাঁর খারাপ লাগায় আর বাগান জনতার মন ভেজে না। ফিরতি ডার্বিতে খেলবেন কথা দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর আশ্বাসে কান দেওয়ার সময় নেই কারও।
এবারের ডার্বি দুই ছোটোবেলার বন্ধুর দ্বৈরথও বটে। ভ্যালেন্সিয়া অ্যাকাডেমি থেকে ফুটবলের পাঠ নেওয়া ডিপান্ডা ডিকা মোহনবাগানের টেলিসম্যান। অন্যদিকে একই সময়ে রিয়াল মাদ্রিদে বেড়ে ওঠা ডিফেন্ডার বোরখা ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের প্রধান প্রহরী। কলকাতা মাঠে সেদিনের দুই বন্ধুর টক্কর বিজয় দিবসের বিকেলের ডার্বিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাই বাঙালির চিরকালীন ম্যাচ সবসময় নতুনত্ব বয়ে আনে যার হিসেব স্কোরবোর্ড পয়েন্ট টেবিলের পরিসংখ্যান দিতে পারে না।
গুছিয়েই নামছে দুই কোচ, দুই দলের ফুটবলাররা। লক্ষ্য একটাই। ডার্বি জিতলেই আই লিগে অনেকটা সুবিধে পাবে দল। হয়তো উঠে আসবে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়েও।