কয়েক বছর আগেও বাচ্চারা মাঠে খেলতে যেত৷ খোলা জায়গাতে ধুলোকাদা মেখে বড় হত শৈশব৷ রূপকথার গল্প, ঠাকুমার ঝুলি, দত্যি-দানবের গল্পগাথায় ঘুম নেমে আসত চোখে৷ বাঁটুল দি গ্রেট, হাঁদাভোঁদার কাহিনীতে খিলখিলিয়ে হেসে উঠত শিশুমনের সারল্যতা৷
ঠাকুমা-দাদু, মা-বাবা, দিদি,দাদা সকলকে নিয়ে পরিবার ছিল যার ফলে ‘একাকীত্ব’ খুব একটা গ্রাস করত না৷ সবার সাথে মিলেমিশে থাকাটাই রেওয়াজ ছিল৷ একসাথে খাওয়া-গল্প-আনন্দ এই সমস্তটাতেই বড় হত সকলে৷ আর সব থেকে আকর্ষণীয় ছিল দাদু-ঠাকুমার আদর!
তারপর ‘একান্নবর্তী পরিবার’-এই ধারণা ভেঙে এল ‘নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি’৷ আর সকলের হাতে উঠে এল মোবাইল৷ মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতার যুগ শুরু হল তখন থেকেই…
পরিবর্তন হল সব কিছুরই৷ মা-বাবা দু’জনেই চাকরী করতে বেরোলেন৷ ফলতঃ যাবতীয় একাকীত্ব এসে গ্রাস করল বাড়িতে একা থাকা শিশুটার ওপর৷ আয়া বা গভর্নেস থাকলেও মা-বাবার অভাবটা থেকেই গেল৷ বাচ্চাকে ভোলাতে কিংবা সে যাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয় বা সে যদি কোনো কথা না শুনতে চায় তাহলে তাকে মোবাইলের লোভ দেখিয়ে সবটা করিয়ে নেওয়ার ফলে শিশুমনকে দারুণ ভাবে গ্রাস করে নিল মোবাইল৷
খুব কম বয়সেই মোবাইল হাতে পেয়ে যাওয়ার ফলে শৈশবের সারল্যের মৃত্যুও ঘটল স্বাভাবিক ভাবে৷ বাচ্চাদের গল্পের বই পড়ার প্রবণতা লোপ পেতে থাকল ফোনেই কার্টুন দেখতে পেয়ে যাওয়ার ফলে৷
খেলার মাঠও আর ডাকে না৷ কারণ সেই ডাকের কন্ঠরোধ করে দিয়েছে প্লে-স্টোরের গেমস্৷ ফ্রুট নিনজা, ক্যান্ডি ক্র্যাশ বা কার রেসিং-এর মত উন্নত প্রযুক্তির গেমের সাথে প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে পড়ল লুকোচুরি, ছোঁয়াছুঁয়ি, হা-ডু-ডু খেলারা৷
সারাদিন একা থাকার ফলে এবং মা-বাবা যতক্ষণ থাকছে বাড়িতে, সেটুকু সময়ের বেশিরভাগ সময়টাতে বাচ্চাকে শান্ত রাখতে হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে মোবাইল৷ ফলে বাচ্চারা কথা শিখছে না বা তাদের কথা বলতেও দেরী হচ্ছে কারণ কথা শুনেই বাচ্চারা কথা শেখে৷
মোবাইল বাচ্চাদের জেদীও করে তুলছে৷ খুব কম বয়সেই চোখে উঠছে মোটা পাওয়ারের চশমা৷ হারিয়ে যাচ্ছে বাচ্চাদের নিজস্ব ভাবনা শক্তি৷ প্রযুক্তির ভালো-খারাপ দু’টো দিকই আছে৷ তবে খারাপ দিকটি তার মারাত্মক থাবা বসিয়েছে শিশুমনে৷