উন্নয়নের পথই তাঁর পথ। জগৎসভায় বাংলাকে সবার সেরা করাই তাঁর লক্ষ্য। ঠিক তেমনি তাঁর জীবনের পণ – ‘ভুলতে পারি নিজের নাম, ভুলব না কো নন্দীগ্রাম।’ বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রামের রক্তে লেখা ইতিহাস ও খলনায়কদের নাম-পরিচয় ভিন্নপথে স্মরণ করিয়ে এবং তাঁদের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সেই নৃশংসতার তদন্তগতি ধীর শুনে মেজাজ হারালেন তিনি। সিআইডি কেন মামলার তদন্ত এতদিনে শেষ করেনি, তার জবাবদিহি চাওয়ার নির্দেশও দিলেন তিনি।
রবিবার সৈকত শহর দিঘায় প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তদারকি করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকেই তাঁর কানে আসে ধীর গতিতে এগাচ্ছে নন্দীগ্রাম তদন্ত। এরপরই উত্তেজিত মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে নির্দেশ দেন, মামলাটি যেন সিআইডি দ্রুত নিষ্পত্তি করে। তিনি সচিবকে বলেন, ‘অত্রি তুমি সিআইডিকে বলো দ্রুত এই তদন্তের কিনারা করতে। এতদিন কেন লাগছে এই কেসে? তাদের দেওয়া হয়েছে মামলাটা করতে। তারা কেন করেনি?’
নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সময়ে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির দুই সমর্থকের নিখোঁজ হওয়ার ১১ বছর পরে ঘটনার তদন্তভার গত জুলাইয়ে হাতে নিয়েছিল সিআইডি। নিখোঁজ দুর্গাপদ মাইতি ও সুব্রত সামন্তের পরিবারের তরফে নতুন করে অপহরণ ও খুনের অভিযোগ হলদিয়া মহকুমা আদালতে দায়ের করা হয়েছিল গত মার্চ মাসে। তাতে নাম ছিল প্রাক্তন সিপিএম নেতা ও সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ-সহ ১৫ জনের। যার মধ্যে আছেন তপন ঘোষ, সুকুর আলিরাও।
বুধবার বাজকুলে সরকারি গুচ্ছপ্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস এবং উপভোক্তা সুবিধা প্রদানের পর প্রায় ৪৮ মিনিটের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামে হওয়া সিপিএমের নৃশংসতায় কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেন। কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন সেদিনের শহিদদেরও। নন্দীগ্রাম, নেতাই, সিঙ্গুরের গণ-আন্দোলনের হাত ধরেই পরিবর্তন এসেছিল বাংলায়, সে কথাই নেতা-কর্মীদের মনে করিয়ে দিয়ে তাঁর হুঁশিয়ারি ছিল, বাংলার বুকে আর হার্মাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে দেবেন না তিনি। আর বৃহস্পতিবার সেই নন্দীগ্রাম নৃশংসতার হার্মাদদের বিরুদ্ধে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগে বিচলিত মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘দ্রুত কিনারা করতে হবে এই তদন্তের।’