বেশ কিছু জায়গার ওপর কয়েকদিন ধরেই নজর রাখছিলেন রাজ্যের ভূমি ও সংস্কার দফতর। খাদান থেকে অবৈধ ভাবে বালি তুলে নেওয়ার অভিযোগ তাঁদের কাছে আসারা পর থেকেই এই বিষয়ে তাঁরা আরও গুরুত্ব দেন। আর তার পরেই বৃহস্পতিবার কাটোয়ায় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অফিসাররা অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে পাকড়াও করেন দুই পাচারকারীকে। দেখা যায় বৈধ চালানের কাগজের তারিখ মুছে সেই জায়গায় অন্য তারিখ লিখে অবাধে কর ফাঁকি দিয়ে চলছিল বালি পাচার। আবার কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল লিখিত পরিমাণের দ্বিগুণ বালি৷ এই চক্রের সঙ্গে খাদান মালিকের যোগসূত্র রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই চক্রটি বেশ কিছুদিন ধরে এই ধরণের অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত। কাটোয়ার পরে হামলা চালানো হয় কেতুগ্রাম ২নং ব্লকের বেগুনকোলা মৌজায় অজয়ের বালি খাদানেও। সেখানে দেখা যায়, অজয় নদী থেকে নৌকাতে অবৈধ ভাবে বালি তোলা হচ্ছিল। সরকারি লোকজন দেখে জলপথেই পিঠটান দেয় পাচারকারীরা। এরপর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের তরফে কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ, নৌকোভর্তি বালির দর ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। কেতুগ্রামের শাঁখাইয়ে অজয় ও ভাগীরথীর সঙ্গমস্থল থেকে বালি তুলে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে কাটোয়া মহকুমায় বৈধ বালি ঘাটের সংখ্যা ২৮টি হলেও বালি পাচারকারীরা অবৈধ উপায়ে অন্যান্য জায়গা থেকে বালি তুলছে।
জেলা ভূমি সংস্কার আধিকারিক উত্তম অধিকারী জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই তাঁরা বেআইনিভাবে বালি তোলা ও নিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে লাগাতার অভিযান চালানোর পরে মেদিনীপুরের কাঁসাই নদীর চরে চাঁদড়া, ধেড়ুয়া, গোয়ালডাঙা, কণকাবতী, মণিদহ, শালবনি, চন্দ্রকোনা, দাঁতন, নারায়ণগড়, শ্রীরামপুর, বেঙ্গাই, রামনগর, হরিশপুর যেসব এলাকায় নদীতে জেসিবি মেশিন নামিয়ে বেআইনিভাবে বালি তোলা বন্ধ হয়েছে। চালানে যে পরিমাণ বালি নিয়ে যাওয়ার উল্লেখ থাকত, ডাম্পারে তার প্রায় দ্বিগুণ বালি নিয়ে যাওয়া হত। এখন তা বন্ধ হয়েছে। বালি মাফিয়ারা মেশিন নিয়ে পালিয়েছে। শ্রমিকরা হাতে বালি তুলছেন। ডাম্পারের বদলে ট্রাক্টরে করে বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একবার কাটা চালান কোনওভাবেই পরের বার যাতে ব্যবহার করা না যায়, প্রতিবারই চালানের রং বদলে দেওয়া হচ্ছে। বালি তোলা থেকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া সবটাই ক্যামেরাবন্দি করা হচ্ছে।
রাজ্য জুড়ে অবৈধ ভাবে বালি তোলা বন্ধ করতে অভিযান যে জারি থাকবে এমন কথাই জানিয়েছেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক দেবাশিস বিশ্বাস। একের পর এক লাগাতার অভিযান এবং পুলিস, রাজস্ব বিভাগ, ভূমি সংস্কার দপ্তরের সাঁড়াশি অভিযানের মুখে কার্যত দিশেহারা বালি মাফিয়ারা।