বুলন্দশহরের পুলিশ ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিংয়ের হত্যার ঘটনা আকস্মিক নয়। এর পিছনে আছে গভীর ষড়যন্ত্র। এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন বুলন্দশহর কাণ্ডে নিহত ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিংয়ের পরিবার। শুধু সুবোধের পরিবার নয়, উত্তরপ্রদেশ সরকারেরই মন্ত্রী ওপি রাজভরেরও দাবি এটাই।
উল্লেখ্য, আখলাক-খুনের প্রথম তদন্তকারী অফিসার ছিলেন এই সুবোধ কুমার সিং। সেই হিসেবে ওই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীও ছিলেন তিনি। মৃতের বোন সুনীতার দাবি, সুবোধ কুমারকে হত্যার পরিকল্পনা অনেক ধরেই চলছিল। কারণ, তিনি ২০১৫ সালের দাদরিতে আখলাক গণহত্যার তদন্ত করেছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিলেন। তখন থেকেই প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া শুরু হয় বলে অভিযোগ মৃতের স্ত্রীর। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এর পিছনে কি কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে? সুবোধকে তাঁরই সার্ভিস পিস্তল দিয়ে গুলি করে মারা হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। আরও প্রশ্ন, আখলাক-খুনের মামলা ভেস্তে দিতেই কি পরিকল্পিত ভাবে তাণ্ডব বাধিয়ে সুবোধকে খুন করা হল?
মৃত ইন্সপেক্টরের বোন সুনিতাও যোগী সরকারকে নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলে বলেন, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে পুলিসও যুক্ত। কারণ, তিনি আখলাক গণহত্যার তদন্ত করছিলেন। এখন রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করতে চাইছে। আমরা টাকা চাই না। আমার ভাইকে শহিদের মর্যাদা দিতে হবে। তাঁর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী দিনরাত ‘গোমাতা’, ‘গোমাতা’ জপ করেন। তাহলে কেন তিনি গোরুর নিরাপত্তায় নিজে নামছেন না? আমরা জানি, গোরু মায়ের সমান। সেই মায়ের জন্য আমার ভাইকে প্রাণ দিতে হল’।
তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি তুলেছেন সুবোধের ছেলে অভিষেক। ‘যে ধর্মের নামে এই বিরোধে আজকে আমার বাবার প্রাণ গেল, কালকে আপনার বাবার জীবন বিপন্ন হবে না তো’? অভিষেক জানিয়েছেন, দৈত্যকুলে প্রহ্লাদের মতো যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যের পুলিশবাহিনীতে ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিং ছিলেন অন্যতম ধর্মনিরপেক্ষ মুখ। ফলে তাঁর ওপর বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর যে রাগ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। এই দুই সংগঠন এবং বিজেপি যুব মোর্চার নাম জড়িয়েছে সুবোধের খুনে। মূল অভিযুক্ত বজরং দলের জেলা আহ্বায়ক যোগেশ রাজকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, সুবোধ সিং অনেক আগে থেকেই হিন্দুত্ববাদীদের নিশানায় ছিলেন। তাঁকে বেশ কিছুদিন ধরেই যে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল, সুবোধের স্ত্রীর তোলা এই অভিযোগ সেই সন্দেহকেই আরও জোরদার করছে।