‘নোটবন্দী কালো টাকায় কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি’। দায়িত্ব ছেড়েই এমন বিতর্কিত মন্তব্য করে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন পূর্বতন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ওমপ্রকাশ রাওয়াত।
পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মুখে যে বিপুল পরিমাণ টাকা নির্বাচন কমিশন বাজেয়াপ্ত করেছে তা দেখেই এমন মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাওয়াত। তাঁর কথায়, ‘সাম্প্রতিককালে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বাজেয়াপ্ত হওয়া অর্থের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, ভোটের সময় এই টাকার জোগান এমন সূত্র থেকে আসছে যারা অত্যন্ত প্রভাবশালী। এবং নোটবন্দীর কোনও প্রভাব তাঁদের ওপর পড়েনি’।
একাধিকবার বিভিন্ন জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী দাবি করেছেন, ৫০০ ও হাজার টাকার নোট বাতিল করায় কালো টাকায় রাশ টানা গিয়েছে। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের এদিনের মন্তব্য মোদির সেই দাবিকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল। কারণ, নোটবন্দির উদ্দেশ্য হিসেবে মোদী তথা কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছিল, এর ফলে বাজারে আর কালো টাকা থাকবে না। অর্থনীতি বাঁচবে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেব অনুযায়ী বাজারে যত ৫০০ ও হাজার টাকার নোট ছিল, তার প্রায় সমমূল্য ফিরে এসেছে। তাহলে প্রশ্ন, কালো টাকা সব কোথায় গেল? তাহলে কি প্রভাবশালী লোকজন কোনও না কোনওভাবে তাঁদের কালো টাকা সাদা করে নিয়েছেন? সদ্য প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারের দাবি যদি যুক্তিসঙ্গত হয়, তাহলে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই ওই সময় তাদের যাবতীয় কালো টাকা সাদা করে ফেলেছে। আর তাই অভিযোগ উঠছে, সেই টাকা ফের খেটেছে পরবর্তী নির্বাচনে।
বিরোধীদের দাবি, নোট বাতিল ফ্লপ হওয়া এবং তার থেকে বিজেপি নেতাদের সুবিধা নেওয়ার যে দাবি উঠেছিল সেটা সত্যি। কারণ দায়িত্ব ছাড়ার আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদ সামলানো ওমপ্রকাশ রাওয়াতই তার প্রমাণ দিয়ে গেলেন।
শুধু নোট বাতিলই নয়, মিজোরামের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের অপসারণ নিয়েও এদিন মুখ খুলেছেন রাওয়াত। তাঁর মতে, মিজোরামের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক এসবি শশাঙ্কের অপসারণ প্রমাণ করে, ‘বড় করে প্রচার করাটা কীভাবে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে। সেখানে আপনার দোষ থাকুক বা না থাকুক।’ রাজ্যের মুখ্য স্বরাষ্ট্র সচিব এল চুয়াউনগোকে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এসবি শশাঙ্কের বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদি এবং রাজনাথ সিংকে চিঠি লিখেছিলেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা। চিঠিতে শশাঙ্কের অপসারণ চান মুখ্যমন্ত্রী। এরপর গত ১৫ নভেম্বর ভোটমুখী রাজ্যটির নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধিদল একই দাবিতে কমিশনের দ্বারস্থ হলে শশাঙ্ককে সরিয়ে দেয় কমিশন।