‘পাবলিক প্লেসে নয়, টয়লেটে গিয়েই সন্তানকে স্তন্যপান করাতে হবে।’ সাউথ সিটি মলে সম্প্রতি এরকমই নিদান শুনতে হল এক মহিলাকে৷ মহিলার হাজার অনুরোধ এবং তাঁর দুধের শিশুটির খিদের জ্বালায় কেঁদে ভাসানো সত্বেও, কর্তৃপক্ষ রইল নিজ মন্তব্যে অনড়।
সাত মাসের সন্তানকে নিয়ে সাউথ সিটি মলে গিয়েছিলেন অভিলাষা পাল। হঠাৎই তাঁর সাত মাসের মেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়৷ তখন তিনি মেয়েকে স্তন্যপান করাতে হবে বুঝতে পেরে মলের ভিতরেই খুঁজছিলেন একটু বসার জায়গা৷ বাচ্চাকে কোলে নিয়েই ছুটছিলেন বিভিন্ন প্রান্তে৷ সব জায়গাতেই কর্তৃপক্ষের কড়া নজর আর একটাই মন্তব্য, ‘টয়লেটে গিয়ে স্তন্যপান করান।’
অবশেষে একেবারে নিচের তলায় গিয়ে পৌঁছন তিনি৷ সেখানে চলছিল মেরামতের কাজ৷ সেখানেও বারবার অনুরোধ করেন অভিলাষা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তখনও নিজ সিদ্ধান্তে অটল৷ এরপর বাধ্য হয়ে তিনি মলের একটি জায়গায় তাঁর শিশুকে স্তন্যপান করাতে শুরু করেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই মলের কর্মীরা এসে তাঁকে নিষেধ করে বলেন, ‘এখানে স্তন্যপান করানো যাবে না। স্তন্যপান করাতে হলে টয়লেটে যেতে হবে।’ তখন নিরুপায় হয়ে তিনি ঢুকে পড়েন শপিং মলের একটি দোকানে৷ সেখানে নানা অনুরোধের পরে অবশেষে ট্রায়াল রুমে সন্তানকে স্তন্যপান করান৷
ক্ষুব্ধ অভিলাষা শপিং মল থেকে ফিরে গোটা ঘটনা বর্ণনা করে ফেসবুকে লেখেন, ‘এত বড় মলে কোনও স্তন্যপানের জায়গা নেই! আপনাদের কর্মী আবার টয়লেটে গিয়ে ব্রেস্ট ফিড করাতে বলেন। বিরক্তিকর, অসহ্য। জঘন্য জায়গা।’ একইসঙ্গে এও জানান, বিষয়টি তিনি কনসিউমার ফোরামে অভিযোগ জানাবেন। এই পোস্টের পরই নেটিজেনরা ওই মলের বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনায় সরব হয়।
কিন্তু অভিলাষার পোস্টের পাল্টা হিসেবে সাউথ সিটি মলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘ব্যাপারটি হাস্যকর এবং অদ্ভুত। এটা কোনও ইস্যু হতে পারে না। নিরাপত্তার কারণেই শপিং মলে স্তন্যপানের অনুমতি দেওয়া হয় না৷ তবুও ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে অনেক সময়ই ছাড় দেওয়া হয়৷ তাই শপিং মলে যে স্তন্যপানের জন্য আলাদা জায়গা নেই, সেটা জেনেই দুধের শিশুকে নিয়ে মলে আসা উচিত। আমরা এই জায়গাটা শপিংয়ের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করেছি৷’ এমন ভাষায় তিরস্কার করার পাশাপাশি অভিলাষাকে এই পরামর্শও দেওয়া হয় যে, ‘ঘরের কাজ ঘরেই সেরে আসুন।’
মলের পক্ষ থেকে এমন বিরূপ মন্তব্যে আগুনে ঘি পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে আরও তীব্র প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। মল কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তুলে তাঁদের ফেসবুক পেজে গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা শুরু করেন নেটিজেনরা৷ বিশেষ করে শহরের মহিলারা গোটা ঘটনাকে ‘অপ্রীতিকর’ দাবী করে মল কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে, শেষে একপ্রকার বাধ্য হয়েই অভিলাষার কাছে ক্ষমা চান সাউথ সিটি মলের কর্তৃপক্ষ। তবে একইসঙ্গে ‘ফেসবুক হ্যান্ডলিং এজেন্সি’র ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টাও করা হয় মল কর্তৃপক্ষের তরফে।