দুধের স্বাদ এতদিন ঘোলেই মিটত পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে আসা ভক্তদের। অনেক দূরদূরান্ত থেকে এসেও দর্শনার্থীরা তিন ভাইবোনকে সামনে থেকে চাক্ষুষ করতে পারতেন না। মন্দিরের ভেতরে ঢুকে বেশ খানিকটা দূর থেকেই তাঁদের বিগ্রহ দর্শন করতে হত। কিন্তু এবার থেকে বদলে যাচ্ছে নিয়ম। পুরীর মন্দিরের গর্ভগৃহের দ্বার অবারিত হতে চলেছে দর্শনার্থীদের জন্য। টিকিট কাটলেই এবার পৌঁছে যাওয়া যাবে একেবারে মূল গর্ভগৃহের সামনে।
পুরীর মন্দিরে দর্শনার্থীদের ভীড় সবসময়ই লেগে থাকে, ফলে ভীড় এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ দর্শনের সৌভাগ্য খুব কম মানুষেরই হয়। তাই তাঁরা যাতে ভীড়ের ধাক্কাধাক্কি এড়িয়ে ভালো করে জগন্নাথ- বলরাম-সুভদ্রাকে দর্শন করতে পারেন সেই উদ্দেশ্যেই মন্দির কর্তৃপক্ষ টিকিট চালু করতে চলেছেন। শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসনের (এসজেটিএ) এক প্রবীণ সদস্য জানিয়েছেন, ‘খুব শিগগিরই পুরীর মন্দিরে চালু হতে চলেছে এই ব্যবস্থা। সারা দিনে মোট চার বার এভাবে টিকিট কেটে জগন্নাথ দর্শন করা যাবে মন্দিরের ‘ভিতর কথা’ থেকে। জায়গাটা আসলে মন্দিরের গর্ভগৃহের একেবারে চৌকাঠের সামনে।’
এসজেটিএ–র মুখ্য প্রশাসক পি কে মহাপাত্র গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আরও কাছ থেকে জগন্নাথ দর্শনের জন্য টিকিট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্দির পরিচালন কমিটি’। দ্বাদশ শতাব্দীর এই মন্দিরের পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান গজপতি মহারাজ দিব্যসিংহ দেব। দর্শনের জন্য টিকিটের দাম কত হবে তা ঠিক করবে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি। টিকিটের ৬০ শতাংশ বিক্রি করা হবে অনলাইনে। কাউন্টারে পাওয়া যাবে ৩৫ শতাংশ। ৫ শতাংশ টিকিট মন্দির প্রশাসনের হাতে থাকবে। মন্দিরের মুখ্য প্রশাসক জানিয়েছেন, ‘ভক্তরা মন্দিরে যেসব স্বর্ণালঙ্কার উপহার দেবেন সেই অলঙ্কার ব্যাঙ্কে জমা রাখা হবে। এই স্কিমে মন্দির কর্তৃপক্ষ আড়াই শতাংশ হারে সুদ পাবে এবং সেই অর্থ মন্দির উন্নয়ন এবং অন্যান্য মন্দির সংক্রান্ত খাতে খরচা হবে’।
ভীড় এবং হুড়োহুড়ি আটকাতে ইতিমধ্যেই পুরীর মন্দিরে পুণ্যার্থীদের লাইনে দাঁড়াবার ব্যবস্থা চালু করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। এবার ভীড় এড়িয়ে একদম সামনে থেকে বিগ্রহ দর্শনের জন্যই এই ব্যবস্থা নিতে চলেছেন তাঁরা। এখন পুরীর মন্দিরে ঢুকতে কোনও প্রবেশমূল্য লাগে না। এই ব্যবস্থা আগের মতই চালু থাকবে। তবে যেসব পুণ্যার্থী সাধারণ দর্শনার্থীদের ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে আরও কাছ থেকে সুস্থিরভাবে জগন্নাথ–বলরাম–সুভদ্রা দর্শনে আগ্রহী, তাঁদের দর্শনের জন্য আলাদা করে টিকিট চালু করছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। এই টিকিট কাটলে একেবারে গর্ভগৃহের সামনে দাঁড়িয়ে জগন্নাথ দর্শনের সুযোগ মিলবে।