‘ওর শুভবুদ্ধির উদয় হোক, ওর এটা জীবন নয়, মরণ!’ কাল’বৈশাখী’তে জামাইয়ের রাজনৈতিক জীবন তছনছ হওয়ার পর হতাশার সুর শোভন চট্টোপাধ্যায়ের শ্বশুরের গলায়৷
শোভন কিন্তু শেষমেশ মজনু বা রোমিওর মতো ‘প্রেমের বলি’-ই হলেন। বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাই যে তাঁর এই পরিণতির জন্য দায়ী, তা জানতে আর বাকি নেই কারও। সত্যি বললে, বিষয়টিকে লোকচক্ষুর সামনে এনেছেন শোভন স্বয়ং। বৈশাখী-নির্ভরতা বাড়ার পাশাপাশি নিজেকে দিন-দিন গুটিয়ে নেওয়া, কাজ-পালানো মানসিকতা, সব কিছু মিলিয়ে শোভন এমন এক অবস্থান নিয়ে ফেলেছিলেন, যেখানে তিনি কেন আছেন, সেই প্রশ্ন উঠছিল বারবার।
তবে ব্যক্তিগত জীবনযাপনকে বাজারি করে তুলে শোভন তাঁর দলকে বারংবার বিড়ম্বনায় ফেললেও, তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আগে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে সংশোধনের প্রচুর সুযোগ দিয়েছেন। দলে প্রভাবশালী কোনও কোনও নেতা-সাংসদের ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও তাঁকে পুরোপুরি ক্ষমতাচ্যুত করেননি মমতা। শোভনের দফতর ছেঁটে, দলীয় দায়িত্ব কমিয়ে, নিরাপত্তা কাটছাঁট করেও তাঁকে মন্ত্রী-মেয়র দুই পদেই রেখে দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি বহুবার নিজেও বুঝিয়েছেন স্নেহের কাননকে। ভর্ৎসনাও করেছেন। এমনকি গত মঙ্গলবারেও। তবে কিছুতেই কাজ হয়নি। শোভন তাঁর ‘প্রিয় বান্ধবী’ বৈশাখীকে প্রাধান্য দিয়েছেন দলের উপরেও।
তথাপি তাঁর বিরুদ্ধে অকস্মাৎ এমন কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার অভিপ্রায় হয়তো মমতার ছিল না। কিন্তু শোভনের পদত্যাগের ভঙ্গি এবং চিঠির ভাষা মমতার কাছে অত্যন্ত অশোভন ঠেকেছে। তিনি কার্যত অপমানিত বোধ করেছেন। মঙ্গলবার নবান্নের একটি সরকারি বৈঠক করার পরে সাংবাদিক বৈঠকেও শোভনের থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেদিন আর বৈঠকমুখো হননি। উল্টে পদত্যাগপত্র দিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি গৌতম সান্যালের কাছে। যাতে লেখা, ‘আন্ডার কম্পালশন’ (বাধ্য হয়ে) তিনি মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিচ্ছেন।
এ ভাবে চিঠি দিয়ে চলে যাওয়া এবং ‘কম্পালশন’ শব্দটি স্বাভাবিকভাবেই মমতার কাছে অসম্মানজনক মনে হয়। তিনি তৎক্ষণাৎ সম্মতি দিয়ে নোট দেন, ‘ইয়েস প্লিজ’। এবং মুখ্যসচিবকে লেখেন, অবিলম্বে রাজ্যপালের কাছে ফাইলটি পাঠিয়ে দিন। শোভন যে ইদানীং মমতাকে এড়িয়ে চলতে চাইতেন, সেটা কারও দৃষ্টি এড়াত না। যেমন, এ বার মমতার বাড়ির কালীপুজোয় এবং ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে শোভনের তাৎপর্যপূর্ণ অনুপস্থিতি। তবু অপার স্নেহে নেত্রী কিছু দিন আগেও ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, ‘কাননের কাজে মন নেই। তবু একটা পদে ওকে রাখব। তাতে ওর একটু মর্যাদা থাকবে। ও আমার বহু সুখ-দুঃখের সঙ্গী। সব সময় পাশে থেকেছে।’ কিন্তু কাহাতক আর সহ্য করা যায়? ফলে যবনিকা পতন ঘটেই গেল। অবস্থা যেদিকে এগোচ্ছে, মন্ত্রীত্বহীন শোভনের মহানাগরিকত্বহীন হওয়া, সম্ভবত সময়ের অপেক্ষা।