যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের সাজা দেওয়া নিয়ে ধুন্ধুমার বেঁধে গেল কলকাতা জেলা সিপিএমের বৈঠকে। সম্পাদকমণ্ডলীর প্রস্তাব পেশে বাধা দেওয়া তো ছিলই, ডামাডোলের জেরে বৈঠক গড়াল রাত ১০ টা অবধি। ‘যৌন নায়ক’দের বাঁচাতে প্রাণপাত চেষ্টা চালিয়েছিল কলকাতা সিপিএমের একটা অংশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। অভিযুক্ত সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায় ও জেলা কমিটির সদস্য সৌম্যজিৎ রজককে ৩ মাসের জন্য সাসপেন্ড করল দল।
সিপিএম সূত্রে খবর, বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কীভাবে ভিডিও বেরিয়ে গেল তার তদন্ত করা হবে। এটাকে অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাঁদের মতে, কেন কৌস্তভ, সৌম্যজিৎ এমন কাজ করল তা না দেখে কীভাবে ভিডিও ফাঁস হল তা দেখা হচ্ছে। এ থেকে স্পষ্ট অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে কলকাতা সিপিএম।
কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, কৌস্তভ এবং সৌম্যজিতের যৌন কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার জোরালো চেষ্টা করেছিলেন সিপিএম নেতা মানব মুখোপাধ্যায়। এমনকি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, সূর্যকান্তের প্রিয়পাত্র ছিলেন কৌস্তভ। কর্মীদের দাবি, কৌস্তভের ঘটনাটি বাইরেই মিটমাট করে নিতে চেয়েছিলেন রাজ্য সম্পাদক। তাই বৈঠক ডাকতে অহেতুক বিলম্ব ঘটেছে। অভিযোগ, সিপিএম নেতাদের পছন্দ-অপছন্দের শিকড় খুব গভীরে। প্রত্যেক নেতারই কিছু ধামাধরা চামচা আছে। কী পরিমাণ তেল নেতাদের পশ্চাৎদেশে মাখানো হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে চামচার ভাগ্যোন্নতি। কৌস্তভের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। তাই যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও প্রকাশ্যে এলেও রাজ্য সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় চোখ বন্ধ করে নিয়েছিল আলিমুদ্দিন।
কৌস্তভও এ ব্যাপারে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। ঘনিষ্ঠমহলে একাধিকবার জানিয়েছেন, এটা ভুয়ো ভিডিও। তাছাড়া আমার মাথায় রাজ্য সম্পাদকের হাত আছে। কেউ কিছু করতে পারবে না। পার্টিও সব জানে। প্রশ্ন উঠছে, ভিডিও যদি ভুয়োই হয়, তবে কৌস্তভ আদালতে গেলেন না কেন? সূত্রের খবর, সূর্যকান্ত মিশ্রের কন্যার সঙ্গে বন্ধুত্বও কৌস্তভের এই ভিডিও অস্বীকার করার ব্যাপারে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, এমনিতেই কলকাতায় ভোট নেই পার্টির। সাধারণ মানুষ দলের থেকে মুখ ফিরিয়েছে। তার মধ্যে মধ্যমেধার ধামাধারীদের রক্ষা করতে গিয়ে আরও ল্যাজেগোবরে হবে দল।
পাশাপাশি যাদবপুরের প্রাক্তণী এবং এসএফআই সদস্য আত্রেয়ী সেনগুপ্তের অভিযোগ নিয়ে বৈঠকে কোনও আলোচনা না হওয়ায় অভিযুক্তদের আড়ালের চেষ্টার অভিযোগ অন্য মাত্রা পাচ্ছে। সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি কৌস্তভ, রজকের পাশাপাশি কলকাতা এসএফআইয়ের সম্পাদক সমন্ময় রাহার বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্য নিয়ে আলোচনা তো দূরের কথা বৈঠকে আত্রেয়ীর অভিযোগের কথা তোলাই হয়নি।
প্রসঙ্গত, যৌন কেলেঙ্কারির নায়কদের আড়ালের চেষ্টা প্রথম থেকেই হচ্ছিল বলে অভিযোগ। কৌস্তভ এবং সৌম্যজিতের যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও ফাঁস হওয়ার পরেও চোখ বেঁধে ছিল আলিমুদ্দিন। কিন্তু নীচুতলার কর্মীদের মধ্যে চাপ বাড়ছিল। বেহালার একটি জনসভায় উপস্থিত থাকলেও পার্টি কর্মীদের বাধায় বক্তৃতা না দিয়েই ফিরে যেতে হয় কৌস্তভকে। এরপরেই এরপরে আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেনি আলিমুদ্দিন। বাধ্য হয়ে বৈঠক ডাকতে হয় তাঁদের।
সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত শুনে হতাশ কৌস্তভ ও সৌম্যজিৎ দুষছেন দলের নেতাদের। তাঁদের কথায়, নেতাদের কথামতো চলাটাই কাল হল।