খোদ মোদীর রাজ্য গুজরাটেই বাঙালির দুর্গাপুজোয় বিভিন্ন বাধা-নিষেধ এনে বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হয়েছে এই বছর। পাশাপাশি আসামে নাগরিক পঞ্জীর ধুয়ো তুলে বাঙালি খেদাও অভিযানও জোরকদমে চলছে। এর নেপথ্যেও সেই বিজেপি। ফলে তাদের এই বাঙালি-বিদ্বেষী ভাবমূর্তি এখন সর্বজনবিদিত। আর এবার দলের অন্দরেই উঠল অভিযোগ, বিজেপি বাঙালি বিরোধী হিন্দিভাষীদের দল।
বিজেপির রাজ্য দফতরে দলের ‘বিদ্বজ্জন’দের নিয়ে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ, রাজ্যে দলের কেন্দ্রীয় সহ পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। সেখানেই বিজেপির বিদ্বজ্জনেরা সাফ জানিয়ে দেন, বিজেপির নেতা কর্মীদের মধ্যে বাঙালি বিরোধী মানসিকতা প্রকট। এক প্রাক্তন আইএএস ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন তোলেন, যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উঁচু পদগুলিতে কখনও এরাজ্যের কোনও বাঙালিকে বসানো হয় না কেন? সম্প্রতি সঙ্ঘ পরিবারের একাংশ ভোজ্য তেলের বিজ্ঞাপনে মাছ ভাজার দৃশ্য নিয়ে আপত্তি করেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, নবরাত্রির সময়ে ওই বিজ্ঞাপন নিরামিষাশী মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে। ওই প্রসঙ্গ তুলেও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজেপির বিদ্বজ্জনেরা। তাঁদের অভিযোগ, এই সব আচরণ বাঙালিকে বিজেপির থেকে আরও দূরে ঠেলে দিচ্ছে। এতদিন বিজেপির বিরুদ্ধে যে বাঙালি-বিদ্বেষী গুঞ্জন বাইরে শোনা যেত, এবার সেটাই চলে এল দলের অন্দরে। বিজেপি কর্মীদের একাংশ একটা একটা করে দেখালেন বিজেপির বাঙালি বিরোধিতার নানা অধ্যায়।
এইসব কারণেই বাংলায় বিজেপির ভবিষ্যৎ একচুলও গড়ে উঠতে পারেনি বলে মত বিজেপি কর্মীদের। আসলে বিজেপি নির্দেশিত নিরামিষ খাদ্যাভ্যাস, উগ্র রুচি, সাম্প্রদায়িক মনন – এই সবকিছু নিয়ে তারা আদ্যন্ত গোবলয়ের দল। যার কোনওকিছুর সঙ্গেই বাঙালির নুন্যতম লেনাদেনা নেই। সেটাই বলে দিলেন দলের কর্মীরা। বললেন, মাছ-ভাত ছাড়ার কথা বাঙালি ভাবতেই পারে না। আর বিজেপির নেতারা নিরামিষ খাবার কথা প্রচার করেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ‘উগ্র’ ভাষা ব্যবহার, বাঙালি রুচির সঙ্গে খাপ খায় না একেবারেই। আর হিন্দুত্বের জিগিরও বাঙালি মানে না। সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে চলাতেই তার আনন্দ। আদ্যন্ত বাঙালি ভাবমূর্তির জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জনপ্রিয়তা। বাঙালির এমন মমতা-প্রীতি। আসলে মমতার মধ্যে বাঙালি পায় নিজের ঘরের মেয়েকে।