আজও লক্ষ্মী মেয়ের পায়ের মাপ হয় ছোট, নতজানু থাকে সমাজে, শ্রীরূপা, গৌরবর্ণা, সুন্দরী, সর্বালঙ্কারভূষিতা। এর বাইরে হলেই অলক্ষ্মী।
অলক্ষ্মীরা বড় সিগারেট খায়, আঁচল বুকে থাকেনা, কালচে বর্ণা হয়, নাভিতে নথ থাকে, চুলের আংশিক হাইলাইটেড।
এছাড়া ডাকিনী যোগিনী দেখা যায়। এসিডদগ্ধ, ওড়নায় কিছুটা মুখ ঢাকা, না বলার বেয়াদবি করেছিল বলে লক্ষ্মী হওয়া হইনি।
লক্ষ্মী তো মর্গ এও দেখা যায়। ওই যে মেয়েটি সর্বালঙ্কারভূষিতা হওয়া সত্ত্বেও আরো পণের টাকা দিতে না পারায় কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল শ্বশুরবাড়িতে।
লক্ষ্মী কি আর ডিভোর্সি হতে পারে? শ্রীরূপা, পতিপরিতক্তা, স্বাবলম্বী মেয়েকে খারাপ মেয়ে বলে ডাকে লোকে। লক্ষ্মী ওদের কাজের লোকের নাম। রোজ লক্ষ্মীকান্তপুর লোকালে আসে। সন্ধে হলে ভাত রাঁধতে আর মার খেতে দৌড়ে বাড়ি ফেরে।
অলক্ষ্মী মেয়েদের জন্যই ছেলেরা মেয়েদের খারাপ বলে, টিজ করে। অনেক লক্ষ্মীমেয়ের ভাবনা। যেরকম ভাবনা সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে। রমণী না ছাই। সংসার সুখী হয় কম্প্রমাইজের গুনে। কে কতটা করবে তার ওপর। বাকিটা পুরুষত্ব ফলানো।অফিসে, লোকাল বাসে, বিছানায়, পুরুষত্ব ও কম্প্রমাইজ ফলাতে পারলেই কেল্লা ফতে। কথা মতো চললে লক্ষ্মীটি, না হলে বেশ্যাটি।
যাইহোক, লক্ষ্মীপুজোর দিনে খিচুড়ি, আলু, বেগুন ভাজা, লাবড়া , চাটনি রান্না হয়েছিল আজ বাড়িতে। রেহানা মাকে সাহায্য করে রান্নাঘরে।
রেহানা মুর্শিদাবাদের মেয়ে। কষা করে মাংস রান্না করতে ভালোবাসে। করেও। সাথে পুজোর থালা সাজানো, ধুপ জ্বালিয়ে দেওয়া, আলপনা আঁকার সরঞ্জাম এগিয়ে দেওয়ার কাজটুকুও করে।
সব লক্ষ্মীর পা ছোট হয় না। হিন্দু ধর্ম হয় না। রাত হলে যখন লক্ষ্মীর কাপড় খুলতে চায় কয়েকটা জানোয়ার, কেউ তারপর থেকে আর তাকে লক্ষ্মী বলে না। প্যাঁচা সব দেখেছিল সে রাতে। রাতেই সে দেখে। লক্ষ্মী থেকে অলক্ষ্মী হওয়া অবধি।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )