থিম-এর রাজ্যে বাংলা বর্ণময়! এ কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গাই নেই আর। গত কয়েক বছর ধরেই কলকাতার পুজোতে সাবেকিয়ানার বদলে থিম আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছে। তবে কিছু কিছু পুজো এখনও আগলে রেখেছে নিজেদের সাবেকিয়ানা। এবার সেই থিম বনাম সাবেকিয়ানার লড়াইতে কলকাতার পুজো আরও জমে উঠেছে। পুজোর এই লড়াই জমিয়ে দিয়েছেন রাজ্যেরই চার মন্ত্রী।
একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোর সভাপতি রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁদের পুজো দীর্ঘদিন ধরেই সাবেকিয়ানায় ভর করেই হয়। পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের চেতলা অগ্রণী এবং পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সুরুচি সঙ্ঘের পুজো থিমের জন্য বিখ্যাত। এই চার পুজো দেখতেই মানুষ দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষা করে থাকেন। লম্বা লাইন পড়ে যায় পুজোমণ্ডপগুলির সামনে।
থিম পুজোকে দেবীর আরাধনার পাশাপাশি উৎসব বলেই মনে করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমরা নিয়ম মেনে দুর্গাপুজো করি। বাকিরাও ভালো পুজো করে, তবে ওগুলো দুর্গোৎসব। আমরা উৎসব নয় মায়ের পুজো করি।
সুব্রতবাবুর কথায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাস। পার্থবাবু বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দুর্গাপুজোকে আন্তর্জাতিক মানের উৎসবে পরিণত করেছেন। সুব্রতদা আগে রমেশ পালকে দিয়ে প্রতিমা বানাতেন। তিনি গড়িয়াহাটে না করে বাটানগরে ওই পুজো করলে ভিড় হত কি? আর গড়িয়াহাট এলাকায় একাধিক ভালো পুজো হয়। নাকতলায় দর্শনার্থীরা একমাত্র আমাদের পুজো উদয়ন সঙ্ঘ দেখার জন্যই আসেন। তাই নাকতলায় ভিড় উপচে পড়ে।
দুর্গাপুজো যে এক উৎসবই, তা স্বীকার করেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। তিনি বলেন, এই উৎসব মানে সর্বধর্মের মানুষের উৎসব। আমরা শুধু পুজো করি না, পুজোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলার শিল্পকলাকেও তুলে ধরি। সেই শিল্পকলা দেখতে সকলে আসেন। সুব্রতদা যে লোকেশনে পুজো করেন, তার অনেক অ্যাডভান্টেজ থাকে। আমাদের চেতলা বা অরূপের সুরুচি সঙ্ঘে শিল্প না থাকলে মানুষ আসবে না। আমাদের পুজো গড়িয়াহাট মোড়ে হয় না, এটাও সুব্রতদাকে বুঝতে হবে।
সুব্রত বাবুর কথা মানতে নারাজ সুরুচি সঙ্ঘের পুজোর প্রধান কর্মকর্তা পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমরা পুজো করি ভক্তিভরে বুদ্ধি করে। সুব্রতদাদের পুজো কন্ট্রাকচুয়াল। এমন পুজোগুলি মূল্য ধরে হয়। ভাবনাচিন্তা করতে হয়না বেশি। মা আমাদের এখানেও আছেন। মা’কে দেখতে সবাই আসেন। সমস্ত রীতি মেনেই তাঁর পুজো হয়। তবে পুরো পুজোতেই থাকে শিল্পের ছোঁয়া।
রাজ্যের চার মন্ত্রীর এই তরজা কলকাতার পুজোকে সরগরম করে তুলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পুজো মণ্ডপগুলিতে ঘুরে বেড়িয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। অমিত মিত্র বাদে প্রায় সব মন্ত্রীই পুজোর সঙ্গে কমবেশি জড়িত। তাঁদের সকলের মধ্যেই ছিল এক অলিখিত প্রতিযোগিতা। তবে সেই প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ছিল সৌজন্যবোধও। যা এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে এবছরের পুজোয়।