থিমের রাজ্যে এবারের পুজো সত্যিই গদ্যময়। প্রতিবারই নিত্যনতুন চমক নিয়ে হাজির হয় বাংলার হেভিওয়েট পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম নিউআলিপুর সুরুচি সঙ্ঘ। এবছর নতুন আঙ্গিকে বাঁশ, কাঁচা মাটি আর টেরাকোটার শৈল্পিক কেরামতি দেখা যাবে সুরুচি সঙ্ঘের পুজোয়। মা দুর্গা এবার হাজির হচ্ছেন মাটির ঘরে।
বাঁশের কাঠামোয় মাটির প্রলেপ দিয়ে এখানে সেজে উঠেছে মণ্ডপ। কাঁচা মাটির নানা কারুকাজ ছড়িয়ে রয়েছে মন্ডপের আনাচেকানাচে। চার হস্তীর সমন্বয়ে বিশাল মণ্ডপের সামনের অংশ সেজেছে বাংলার আলপনায়। অন্দরমহলে কাঁচা মাটি মনোরম ত্রিমাত্রিক ও ম্যুরালের কাজ। কাঁচা মাটিতে মণ্ডপগাত্রে ফুটে উঠেছে প্রাকৃতিক দৃশ্য। ধান খেত, গাছ, বাবুই পাখির বাসা, পাখি, ফুল— সবই তৈরি হয়েছে কাঁচা মাটিতে।
মণ্ডপের ভেতরের ছাদে পেঁপে গাছের ছালে নতুন আঙ্গিক। শৈল্পিক রূপ পেয়েছে এই ছাল। প্রাকৃতিক রং আর মাটির সংমিশ্রণে তৈরি ‘ছাল’ বাংলার দক্ষ মৃৎশিল্পীদের স্বাক্ষর বহন করছে। মণ্ডপের দুই দ্বার তৈরি হয়েছে বাঁকুড়ার পাঁচমুড়ার টেরাকোটা শিল্পের আদলে। একটি রূপ পেয়েছে পেঁচার, অন্যটি ঘোড়ার। গোটা মণ্ডপজুড়েই রয়েছে বাংলার অতি আপন চিত্রশৈলী আলপনা।
শিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনা ও সৃজনে তৈরি এই কাঁচা মাটির মণ্ডপে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে ক্লাব সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাবনায় ফুলের টব আর মাটির হাঁড়ির শৈল্পিক রূপদান। কোথাও সর্বধর্মসমন্বয়ের প্রতীক হিসেবে ফুলের টব রূপ পেয়েছে সান্টাক্লজের, কোথাও বা গ্রামের ঘরের।
ডিজাইনার সুদীপ চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে এরকম ১০২টি মডেল তৈরি করেছেন তিন শিল্পী বাদল হালদার, স্বপন জানা ও মুক্তা জানা। মণ্ডপের তিন ধার সেজে উঠেছে এই সব মডেলে। আবার মৃৎশিল্পী নব পালের গড়া সুরচি সঙ্ঘের প্রতিমাতেও রয়েছে নতুনত্ব। শুধু গণেশজননী নন, দুর্গা এখানে গণেশ ও কার্তিক জননীও। দুই ভাই বসে আছে মায়ের দুই ক্রোড় আলোকিত করে। দুর্গার দুই অঙ্কে দুই কন্যা লক্ষ্মী আর সরস্বতী। সুরুচির পুরো মণ্ডপ জুড়ে আলো-আঁধারি খেলা। এখানে আলোর দায়িত্বে আছেন প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী।
প্রসঙ্গত, এবছরও সুরুচির থিম সং রচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এবার তিনি নিজে সুরও দিয়েছেন ওই গানটির। গানটি গেয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেন। তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন আরেক বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র। গানটির চিত্রায়ণের দায়িত্বে ছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।