আজ সোমবার, মহাষষ্ঠী। বাপের বাড়িতে পা রাখলেন উমা। চলছে মাকে ঘিরে বোধনের নানা আচার অনুষ্ঠান। আগমনীর সুরে উৎসবের সূচনা। এই শুভ লগ্নে গা ভাসিয়েছে আট থেকে আশির বাঙালি। মহাষষ্ঠী মানে সপরিবার উমার পিতৃগৃহে আগমনের দিন।
বিল্ববৃক্ষ তলে দেবীর আরাধনা। সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক। সপরিবার একরাত সেখানেই থাকবেন মাদুর্গা। সপ্তমীর সকালে পা দেবেন বাপের বাড়িতে। শুচিশুদ্ধ হয়ে।
সকাল থেকেই মেঘমুক্ত আকাশ। উঁকি মারছে সূর্য। বাঙালি তাই দারুণ খুশি।
কলকাতার সমস্ত বড় পুজোর উদ্বোধন শেষ। এবার পুজোয় ৭০টি প্রতিমা উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্যোগ উপেক্ষা করেই তিনি ঘুরেছেন মণ্ডপে মণ্ডপে। শুধু তাঁকে দেখতেই ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘পঞ্চমীর সকাল থেকে দুর্যোগ কেটে যাবে’। তাঁর কথা মিলেছে। পঞ্চমীতে আবহাওয়া পরিষ্কার হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী অনেকটাই নিশ্চিন্ত। বাড়ি থেকেই খোঁজ রেখেছেন। পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাত জেগে পরিস্থিতির ওপর নজর রেখেছেন। বিভিন্ন এলাকার কন্ট্রোল রুমে খোঁজ নিয়েছেন। যোগাযোগ রেখেছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের সঙ্গেও। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন দলীয় নেতাদের সঙ্গে।
পঞ্চমীর পর ষষ্ঠীর শুরুও ফুটফুটে দিনে। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ঢাকের আওয়াজে জমে গেছে ষষ্ঠীর সকাল। সেই আমেজের রেশ নিয়েই কাটবে বাকি দিন। সকাল থেকেই পুজো মণ্ডপগুলিতে তারই প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সকলে। ভিড় এড়াতে অনেকেই ষষ্ঠীর সকালে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়েছেন দেবী দর্শনে। আগেভাগে যত বেশী প্রতিমা দেখে নেওয়া যায়। উৎসবের স্বাদ নিতে আশপাশের জেলা থেকেও বাসে-ট্রেনে কলকাতায় ভিড় জমিয়েছেন জেলার মানুষেরা। বিকালের পর থেকে আলোর রোশনাই।
এসবের পাশাপাশি চলছে শেষ মুহূর্তের ‘পুজো-শপিং’। অনেকে আবার মা দুর্গার সঙ্গে তুলে ফেলছেন সেলফি। মণ্ডপের বাইরে বেরতে বেরতে তা পোস্ট হয়ে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। গতবছর পুলিশ সেলফি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এবার খোলা ময়দান। তাই সেলফির সেলফে উপচে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়াও।
এবার দেবী দুর্গার দোলায় আগমন। ফল- মড়ক। দশমীর পরে মাদুর্গা গজে গমন করবেন। ফল- শষ্যপূর্ণা বসুন্ধরা। আদ্যাশক্তি মহামায় দুর্গার মূল পূজা হয় বসন্তকালে, চৈত্রের তিথিতে। তাই তাকে এই পুজো করেছিলেন লঙ্কার রাজা রাবণ। পেয়েছিলেন অমরত্ব। তাই কোনওভাবেই রামচন্দ্র রাবণকে বধ করতে পারছিলেন না। কারণ দেবী দুর্গা সকল শক্তির উৎস। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিবের তেজ থেকে মা দুর্গার সৃষ্টি। তাই তিনি শক্তির আধার। রাবনকে বধ করতেই মূলত শ্রীরাম শরৎকালে অকালে আহ্বান করে দুর্গাকে মর্ত্যে আনেন। তাই শরতের এই শারদীয় দুর্গা উৎসবকে অকাল বোধন বলা হয়।