সকাল থেকেই চেতলার ‘নবনীড়’ সেজেগুজে রেডি। ফি বছর পুজোর সময় তিনি আসেন। এবারও আসবেন। তাই জীবন সায়াহ্নে পৌঁছনো মানুষগুলো ‘তাঁর’ আসার অপেক্ষায়।
এই ‘তিনি’ আর কেউ নন, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘরের মেয়ে মুখ্যমন্ত্রী হলেও রয়ে গিয়েছেন একইরকম। শাড়ি-মিষ্টি হাতে প্রতিবছর পুজোয় মমতা আসেন সন্তান, পরিবার-পরিজন ছেড়ে ‘নবনীড়’-এ থাকতে আসা অসহায় বৃদ্ধা মানুষগুলোর কাছে। এবারেও এলেন চতুর্থীর বিকালে। মমতা ঢুকতেই বৃদ্ধা আবাসিকেরা গেয়ে উঠলেন, ‘আজি শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও/জননী এসেছে দ্বারে’। আবেগে ভেসে গেলেন সবাই। কয়েক বছর আগে মা’কে হারিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু প্রতিক্ষণে তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন সেই মা। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললেন, ‘এখানে এলে মা’কে খুঁজে পাই। নবনীড়ে না এলে পুজোটাই অসম্পূর্ণ’।
ততক্ষণে আবাসিক বৃদ্ধারা ফিরে গেছেন কিশোরী বেলায়। কেউ গাইছেন, কেউ হাততালি দিচ্ছেন আবার কেউ বা ঘরের মেয়েকে কাছে পেয়ে ধরে রাখতে পারছেন না চোখের জল। গানবাজনাও হল। আবাসিকদের গান শোনাতে প্রতিবার আসেন গায়ক-মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, এদিনও এসেছিলেন গান শোনাতে। মমতার লেখা কয়েকটি গান গেয়ে শোনান মন্ত্রী–গায়ক ইন্দ্রনীল সেন। আয়োজকদের তরফেও সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। মমতাও ঘুরে ঘুরে প্রত্যেক আবাসিকের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে কথা বললেন। কুশল বিনিময় করলেন। কাউকে আবার জড়িয়ে ধরলেন আন্তরিকতার সঙ্গে। নবনীড়ের এক ঝাঁক মাতৃসমার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেলেন মা-মাটি-মানুষের মুখ্যমন্ত্রী।
আবাসিকদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফিরহাদ হাকিমকে নবনীড়ে লিফ্ট বসাতে বলেছি। এখন থেকে ওপরনিচ করতে আপনাদের আর অসুবিধে হবে না। গত ১০ বছর ধরে ‘নবনীড়’-এ নিজেকে ঘরবন্দি রেখেছিলেন ৮৬ বছরের বৃদ্ধা বীথিকা ঘোষ। হাঁটতে পারেন না। এবার তিনি হুইলচেয়ারে করে এসেছিলেন মমতাকে দেখতে। মমতা বৃদ্ধা বীথিকাদেবীর সঙ্গে কথা বলেন। দৃশ্যতই আপ্লুত হুইলচেয়ার-বন্দি বীথিকা। মমতা তাঁদের বলেন, ‘অসহায় বোধ করবেন না। জীবন নিয়ে চিন্তা করবেন না। মনে দুঃখ রাখবেন না। কথা বলবেন, গান শুনবেন। দেখবেন, মন ভাল থাকবে’।
আবাসিকদের অষ্টমী ও নবমীতে প্রতিমাদর্শনে নিয়ে যাবেন ফিরহাদ। মমতাও তাঁর বাড়িতে কালীপুজোয় আবাসিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।