শনিবার সকালে সূর্য্যিমামা একবার দেখা দিয়েই লুকিয়ে পড়েছিল মেঘের আড়ালে। তারপর সারাদিন ধরেই মুখভার আকাশের। চতুর্থীর সকাল-সন্ধ্যা তাই মনখারাপ করেই কেটেছে বাঙালির। তবে মিলে গেছে আবহাওয়া দফতরের ভবিষ্যৎবাণী। জানানো হয়েছিল, রবিবার সকাল থেকেই রোদের দেখা মিলবে। তাই হয়েছে। পঞ্চমীর সকাল থেকে সেজেগুজে হাজির সূর্য্যিমামা।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস, শক্তি হারিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’৷ আপাতত তার গন্তব্য বাংলাদেশ৷ পুজোয় বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছে হাওয়া অফিস৷
দুর্যোগ কেটে যাবার কথা আগেই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মমতা বলেন, ‘মেঘলা আকাশ আর থাকবে না। দুর্যোগ কেটে যাবে’। মিলে গেল মুখ্যমন্ত্রীর কথা। চতুর্থীর দিন মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন ‘নবনীড়’ আবাসনে। হাতে নতুন শাড়ি, মিষ্টি। প্রত্যেক আবাসিকের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন মমতা। নিজের বাড়ির কালী পুজোয় আবাসিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশপাশি আলিপুর বডিগার্ড লাইনের প্রতিমা উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে ছিলেন নগরপাল রাজীব কুমারও।
তবে ‘তিতলি’ বাঙালির পুজো দেখা আটকাতে পারেনি। কলকাতার পুজোর জাঁকজমক চোখের দেখা দেখতে চান গ্রাম-মফঃস্বলের লাখো বাসিন্দা। কলকাতার ডাকসাইটে পুজোগুলি দেখার জন্য তাঁরা বেশিরভাগই বেছে নেন চতুর্থী বা পঞ্চমীর রাতকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সন্ধ্যায় যখন ‘তিতলি’-র জেরে একপ্রস্থ হালকা বৃষ্টি নামল, তখন শ্রীভূমি থেকে শুরু করে কুমোরটুলি পার্ক হয়ে তেলেঙ্গাবাগানে থিকথিক করছে ভিড়। কলেজ স্কোয়ারের ঝাড়বাতির বাহার যদি এই বেলা দেখে নেওয়া যায়, তার জন্য মানুষের আগ্রহ ছিল প্রচুর। আবার শিয়ালদহ ঘেঁষে অপেক্ষায় ছিলেন প্রচুর মানুষ। সেখানে এবারের আকর্ষণ রূপোর রথ। গতবার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো মাত করেছিল প্রতিমার গায়ে অঢেল সোনার গয়না চাপিয়ে। ষষ্ঠীতেই সেই প্রতিমা দর্শনের লাইন চলে এসেছিল বউবাজার পর্যন্ত। এবার তাই রথদর্শনে চতুর্থীর সন্ধ্যা ফুরসত পেল না এতটুকু। নামজাদা পুজোগুলির পাশাপাশি ভিড় জমল তুলনামূলক অনামী মণ্ডপেও। ল্যান্সডাউন প্লেসের শক্তি সাধনা সঙ্ঘ থেকে শুরু করে চক্রবেড়িয়া সর্বজনীন হোক বা ৬৪ পল্লির পুজো – অফুরান আনন্দের সাক্ষী থাকল সব মণ্ডপ। মোবাইল আর ক্যামেরায় লেন্সবন্দি হলেন দেবী। শিল্প সুষমায় উপচে ওঠা মণ্ডপ দেখে মুগ্ধতার অন্ত রইল না। প্রাণের উৎসবের নাড়া বেঁধে দিল জমজমাট চতুর্থী। আজ জনজোয়ারের অপেক্ষায় পঞ্চমী।