চলতি বছরের জানুয়ারিতে একরাশ বেদনা নিয়ে মোহনবাগান ছেড়েছিলেন সনি নর্ডি। যাওয়ার আগে বাগান সভাপতি টুটু বসুকে কথা দিয়েছিলেন চোট সারিয়ে পুরো ফিট হয়ে সবুজ– মেরুন জার্সিতে সেরা দিতে আবার ফিরবেন। হাইতিয়ান তারকা মোহনবাগান সমর্থকদের নয়নের মণি স্ট্রাইকার সেই মতো নিজেকে ফিট করতে নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন এতদিন। একইসঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে গেছেন বাগানের দুই শীর্ষ কর্তা সৃঞ্জয় বসু ও দেবাশিস দত্তর সঙ্গে। শেষপর্যন্ত সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবার আই লিগের আগে বাগানে ফিরছেন সনি। তাঁর বাগানে সই করার কথা জানিয়েছেন সচিব পদে নির্বাচিত হওয়া নিশ্চিত হয়ে যাওয়া টুটু বসু। সনি মেডিক্যাল ও ফিটনেস টেস্ট দিতে রাজি হওয়ায় তাঁকে নিতে কোনও দ্বিধা দেখাননি বাগান কর্তারা। চোট সারিয়ে ওঠার পর সনি কতটা ফিট তা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা ছিল। এই ফিটনেস নিয়ে প্রশ্নে সনির সাফ জবাব, ‘আমি একশো শতাংশ ফিট। সে কারণেই মেডিক্যাল ও ফিটনেস টেস্ট দিতে রাজি। ফিটনেসের ব্যাপারে পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী। চোটের জায়গায় অপারেশন হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে। আগস্ট পর্যন্ত রিকভারিতে ব্যস্ত ছিলাম। কয়েকমাস ধরে কড়া স্ট্রেংথ ট্রেনিং করেছি। পাশাপাশি বল নিয়েও কসরত চালিয়েছি। আসলে মোহনবাগান জার্সিতে খেলার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। মাঠে ফিরে সেরা দিতে মরিয়া আমি। ইস্টবেঙ্গল–সহ অনেক দলের অফার ছিল। কিন্তু মোহনবাগান ছাড়া অন্য কোথাও খেলার কথা কখনও ভাবিনি।’ সনি জানালেন, ‘চোট সারিয়ে মাঠে ফেরার পেছনে ডাঃ মারিয়ানো চাকনের অবদান অনস্বীকার্য। কলকাতা থেকে সোজা চলে গিয়েছিলাম আর্জেন্টিনায়। ওখানে মেন্ডোজা হাসপাতালে ডাঃ চাকন আমাকে সুস্থ হয়ে উঠতে দারুণভাবে সাহায্য করেন। দুটো বড় ধরনের চোট ছিল আমার। একটা এসিএল , অন্যটা ইনার মিনিসকাসে। চাকন যত্ন নিয়ে আমার চোটের অপারেশন করেন। কী করলে তাড়াতাড়ি ফিট হব, সেই শিডিউলও ঠিক করে দেন। ডাঃ চাকনের জন্যই আমি এত তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরতে চলেছি।’ বাগান জার্সিতে আবার সেরা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন বলে টুটু বসু, সৃঞ্জয় বসু, দেবাশিস দত্তর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সনি। একইসঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁর ভক্ত ও সমর্থকদের, আগাগোড়া পাশে থাকার জন্য। সনি বলেন, ‘চার বছর ধরে সৃঞ্জয়, দেবাশিসের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। ওরা শুধু বন্ধু নয়, আত্মীয়। ওদের জন্য আমার কখনও মনে হয়নি পরিবারকে মিস করছি। কলকাতা থেকে চলে আসার পরও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল ওদের সঙ্গে। সমর্থকদের ভালবাসা কম নয়। কলকাতা ছাড়ার সময় ওদের কথা ভেবেই কেঁদেছিলাম। এখন ফিরে ওদের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। কথা দিচ্ছি বাগান কর্তা বা সমর্থকদের নিরাশ করব না। আপনারা চেনা সনি নর্ডিকেই দেখতে পাবেন। আরও চনমনে, আক্রমণাত্মক মেজাজে।’ বাগানের থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়েই ভিসার জন্য আবেদন করেছেন সনি। আশা করছেন ১০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ পুজোর পর যে কোনওদিন কলকাতায় এসে পড়বেন তিনি। আই লিগ জেতার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী, এই প্রশ্নে সনির উত্তর, ‘হারতে কেউ চায় না। আমিও চ্যাম্পিয়ন হতেই চাই। আই লিগের লড়াই সবসময় কঠিন। বোঝাপড়া ঠিকঠাক হওয়া খুব জরুরি এই ধরনের প্রতিযোগিতায়। মাঝে কিছুটা সময় খেলার বাইরে থাকলেও কলকাতা লিগ ও বাগানের দল সম্পর্কে সব খবরই রেখেছি। আট মরশুম বাদে মোহনবাগান কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার জন্য কোচ শঙ্করলাল ও দলের ফুটবলারদের অভিনন্দন। কোচ শঙ্করলাল থাকতে পরিকল্পনার অভাব হবে না। গত মরশুমে মাঝপথে দায়িত্ব নিয়ে শঙ্করলাল দলকে খেতাব জয়ের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। দলটাও তো শক্তিশালী হয়েছে ডিপান্ডা, হেনরি, ইউতা, কিংসলের মতো বিদেশি ছাড়াও একঝাঁক প্রতিভাবান ঘরের ছেলে থাকায়। এবার তাই আই লিগ জয়ের আশা করতেই পারি।’ প্রত্যাশা পূরণের চাপ থাকবে। তবে তার জন্য ঘাবড়াচ্ছেন না সনি। ইস্টবেঙ্গল বড় বাজেটের দল গড়েছে, কোস্টা রিকান বিশ্বকাপার অ্যাকস্টা–সহ তিনজন ভাল মানের বিদেশি নিয়েছে, মালয়েশিয়ায় আই লিগের প্রস্তুতি সারছে স্প্যানিশ কোচ আলেসান্দ্রোর তত্ত্বাবধানে। এটা শুনে সনির প্রতিক্রিয়া, ‘ইস্টবেঙ্গল কোচ ও কোস্টা রিকান বিশ্বকাপারের জন্য শুভেচ্ছা। তবে খেলা হবে মাঠে, কাগজে কলমে নয়।’ ১৬ ডিসেম্বর আই লিগের প্রথম ডার্বিতে যুবভারতীতে আপনার সেই বিখ্যাত স্টেনগান সেলিব্রেশন আবার দেখা যাবে কি? সনির জবাব, ‘সত্যি শিলিগুড়ির ওই ডার্বির কথা ভোলার নয়। শুধু আমার গোল বা সেলিব্রেশন নয়, আজহারের গোলটাও ছিল দুর্দান্ত। যদি আবার গোল পাই, তাহলে সামনের ডার্বিতে আর একবার স্টেনগান সেলিব্রেশন করতে পারি।’ সবশেষে সনি বললেন, শুনেছি মেয়েরা বাবার জন্য লাকি হয়। আমার মেয়ে হ্যানিও আমার জন্য লাকি সেদিক থেকে। তাই মোহনবাগান জার্সিতে প্রথম গোল করে সেটা ওকে উপহার দেব।
(সংগৃহীত)