গত সপ্তাহের মাঝের দিকে জগৎ মুখার্জী পার্কের সার্বজনীন পুজোর মণ্ডপে ঢুকছি, তখন আলো পড়ে এসেছে। তৃতীয়ার দিন উদ্বোধন হবে মণ্ডপের। ফলে হাতে আর সময় নেই। জোর কদমে হাত চালাচ্ছেন মণ্ডপ সজ্জার কারিগররা। যে শিল্পীর ভাবনায় এই পুজোর মণ্ডপ একটু একটু করে সেজে উঠছে, সেই সুবল পাল প্রবল ব্যস্ত কারিগরদের জরুরি নির্দেশ দিতে। একটু একটু করে রূপ পাচ্ছে ‘টাইম মেশিন’।
হ্যাঁ। টাইম মেশিন। এবারের জগৎ মুখার্জী পার্কের পুজোর থিম। এর আগেই জানিয়েছিলাম এই তথ্য। শিল্পী সুবল পালকে প্রশ্ন করেছিলাম ‘এই টাইম মেশিনে আমরা কতদূর পিছিয়ে যাচ্ছি?’ তাঁর উত্তর ছিলো “এটাই তো মজা। এই টাইম মেশিনে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ভবিষ্যতে। অতীতে পিছিয়ে যাচ্ছিনা”। কেন এই উলট-পুরাণ? ব্যাখ্যা করে সুবল বললেন “আসলে এবারের এই পুজো মণ্ডপের থিম-এর ভাবনায় উঠে আসবে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’। এর অনেকটাই জুড়ে আছে কল্পবিজ্ঞান। এমনিতেই রোবট এখন নানা ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর কিন্তু বেশিদিন বাকি নেই, যখন এই পৃথিবীটা হয়তো পুরোটাই রোবট দ্বারা চালিত হবে। হয়তো আর ২০০ বছরের মধ্যেই সেরকম কিছু একটা হবে। আবার গুহামানব যেমন ধীরে ধীর বিবর্তনের মাধ্যমে আজকের সভ্য মানুষ হয়েছে, তেমনই বিবর্তিত হয়ে রোবট মানবও হয়ে উঠতে পারে।”
বোঝাই গেলো এই ‘টাইম মেশিনে’ টাইম ট্রাভেল করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সেই রোবট মানবের যুগেই। কিন্তু যদি সত্যিই এমন পরিস্থিতি আসে, সেটা কি মানুষের জন্য খুব ভালো হবে? “না। এই মণ্ডপসজ্জার মাধ্যমে আমরা এই মেসেজটাই দিতে চেয়েছি, যে বিজ্ঞানের মতো প্রকৃতিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। একটা ভারসাম্য প্রয়োজন। তবেই তো একটা সুন্দর পৃথিবী গড়ে উঠবে।”
টাইম মেশিন বলে কথা। মণ্ডপে ঢুকে দেখা গেলো ইতিমধ্যেই সেখানে দাঁড়িয়ে ছোট বড়ো নানা রকমের চাকা। সেগুলোর কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। এই চাকার মধ্যে বসবে নানা ইন্সটলেশনের কাজ। আলোর ব্যবহারও এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। মূলত কাঠ, ধাতু, কাঁচের ব্যবহারে সেজে উঠছে এই ‘টাইম মেশিন’ মণ্ডপ।
এই নিয়ে পর পর তিনি উত্তর কলকাতার ৮২ বছরের পুরনো, এই পুজোর মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে। আগের বছরে তাঁর সাবমেরিনের মণ্ডপ প্রশংসা পেয়েছিলো। তার আগের বছর ‘ডাউন বনগাঁ লোকাল’ থিমের মণ্ডপ দেখতেও লাখো মানুষের ভিড় হয়ছিলো। এই বছরও মানুষের এই অভিনব ‘টাইম মেশিন’ ভালো লাগবে বলেই আশা করা যায়।
এই থিম সাজানোর আগে কল্প বিজ্ঞান নিয়ে বিস্তর রিসার্চ চালিয়েছেন সুবল। তারপর মাস দুই আগে থেকে কাজ শুরু হয়ে গেছে। ৩৫ জন কারিগর দিন রাত এক করে কাজ করছেন সময়ের মধ্যে মণ্ডপটিকে সাজিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে।ঢাকে কাঠি পড়তে বেশিদিন বাকি নেই যে।