কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মোহনবাগান। সেই জয়ের আনন্দ এখনও চলছে। তবে ক্লাবে এই মুহূর্তে সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে নির্বাচন। গঙ্গাপারের ক্লাবে এখন শুধুই নির্বাচনের দামামা। বাগানের ভোটরঙ্গ এখন ময়দানের রীতিমতো হটকেক। শাসক গোষ্ঠীকে পিছনে ফেলে প্রতিদিনই শহর, মফসসলে সভা করছে টুটু বসু গোষ্ঠী।
সেই নির্বাচনী জনসভা রবিবার ছিল বেহালার শরত সদনে। আর সেখানেই হাজির ছিলেন সিএবি সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি। জনসভায় হাজির হয়ে নিজের বক্তব্যও রাখেন মহারাজ।
যে ভাবে ব্যাটিং করতেন সেভাবেই বক্তব্য পেশ তাঁর। তিনি জানান, “আমরা যখন খেলতাম তখন টুটুদা মাঠ করতেন। এখন সৃঞ্জয় করছে। যথেষ্ট যোগ্যতার সঙ্গেই করছে।” সদস্যদের প্রতি তাঁর আহ্বান, “ভেবে চিনতে ভোট দেবেন। যারা ক্লাবকে আগামী দিনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, তাঁদেরকেই ভোট দেবেন”।
বক্তব্য পেশ করার সময় সৌরভ বলেন, ‘প্রশ্ন হতেই পারে, সৌরভ গাঙ্গুলি এখানে কী করছে? এটা মোহনবাগান ক্লাবের অনুষ্ঠান। মোহনবাগানের নির্বাচনী প্রস্তুতিতে আমার কী ভূমিকা? সত্যি বলতে কী আমি কোনও দিন ইলেকশন করিনি। আসলে এমন জায়গায় কখনও পৌঁছয়নি আমার ক্ষেত্রে। একটা সময় পর্যন্ত খেলেছি। বর্তমানে সিএবি প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছি। কয়েক মাস পর সিএবি–তে ইলেকশন হবে। ইলেকশনের গুরুত্ব বা মানুষের কাছে পৌঁছনোর কতটা দরকার এখন সেটা বুঝছি। তবে বলতে দ্বিধা নেই, সিএবি আর ইস্টবেঙ্গল–মোহনবাগানের ইলেকশনের মধ্যে অনেক ফারাক।
সিএবি–র ইলেকশনটা ছোট জায়গার মধ্যে। অল্প কিছু মানুষের ভেতর। সেখানে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের ভোটার সংখ্যা অনেক বেশি। তাই লড়াইটা বেশ জমজমাট। সৃঞ্জয় আমার ছোট ভাইয়ের মতো। ডন বসকোতে যখন পড়ত তখন থেকে আলাপ। ওর বাবা টুটু বসুর সঙ্গে পরিচয় বা ঘনিষ্ঠতা অনেক বেশি মোহনবাগানে খেলার সময় থেকে। এদিনের সভায় কম্পটন দত্ত, সত্যজিৎ চ্যাটার্জির মতো ফুটবলের মহারথীরা আছেন। যাঁরা এখন এখানে নেই সেই সুব্রত ভট্টাচার্য, মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, উলগানাথনের মতো দিকপাল ফুটবলারদের খেলা দেখেছি হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায়। বাবার মেম্বারশিপ কার্ডে সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে বিকেল ৪টেয় মিনিবাস ধরে পৌঁছে যেতাম মাঠে খেলা দেখতে। শুধু মোহনবাগান নয়, ইস্টবেঙ্গলের খেলাও দেখতে ছুটতাম। খেলার প্রতি এমন টান ছিল। ফুটবল আর ক্লাবের প্রতি ভালবাসা টের পেয়েছি টুটু বসুকে খুব কাছ থেকে দেখে। ওদের গোটা পরিবারটাই ফুটবল ও ক্লাবের প্রতি কমিটেড। মোহনবাগান ক্লাবের প্রতি অসম্ভব ভালবাসা ও দায়বদ্ধতা না থাকলে কেউ ঘর থেকে টাকা এনে ক্লাবের পেছনে অকাতরে ব্যয় করতে পারে না। ব্যক্তিগত ব্যবসার ক্ষতির কথা মাথায় না রেখে এতটা সময় ব্যয় করতে পারত না। এটা বলতে চাই, নির্বাচনে কেউ হারবেন, কেউ জিতবেন, কিন্তু মোহনবাগান ক্লাবের ঐতিহ্য ও সম্মান সবার ওপর থাকবে। ১২৯ বছরের পুরনো ক্লাব। ১৯১১ সালের ঐতিহাসিক শিল্ডজয়ের কথা জানি। নির্বাচন এক মাসের, কিন্তু মোহনবাগান ক্লাব থাকবে শত শত বছর। সেই ক্লাবকে সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নিতে যেতে গেলে যোগ্য লোকের হাতেই ক্লাবের পরিচালনভার থাকা উচিত। ক্রিকেট অনেকটাই প্রিভিলেজড ক্লাস। ফুটবল এখনও সেই মর্যাদা পায় না, জনপ্রিয়তা যেমনই হোক।
সেই ফুটবল আর ক্লাবের জন্য টুটু বসু, সৃঞ্জয়রা যা করেছেন, তার তুলনা হয় না। বাড়ি থেকে টাকা এনে ক্লাব চালানোর জন্য ওঁদের বাহবা না দিয়ে উপায় নেই। আমার একটা ছোট ক্লাব আছে। বড়িশা স্পোর্টিং। সেটা চালাতে কতটা কষ্ট করতে হয় বা সময় দিতে হয়, সেটা আমি জানি। আমি সৃঞ্জয়কে বলেছিলাম, তুমি ক্রিকেট মাঠে আস না কেন? একইসঙ্গে এও বলেছিলাম, ফুটবল মাঠে এত সময় দাও কীভাবে নিজের কাজের ফাঁকে? একটা অনারারি জবে ভালবাসা না থাকলে এটা সম্ভব নয়। কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলাম, তিন বড় ক্লাবের মাঠে ফ্লাডলাইট বসিয়ে অনেক বড় উপকার করেছেন। খেলাধুলার প্রতি ভালবাসা না থাকলে এটা হয় না। আমার বিশ্বাস, আগামী দিনেও সবুজ–মেরুন পতাকা টুটু বসু, টুম্পাইয়ের হাতে উড়বে উঁচুতে। আবারও বলছি, নির্বাচন অল্প সময়ের, কিন্তু ক্লাবকে দীর্ঘদিন ধরে সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো মানুষকে ক্ষমতায় আনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আট মরশুম পরে মোহনবাগান কলকাতা লিগ জিতেছে। ক্রিকেটেও সাফল্য পেয়েছে। টুম্পাইকে আমার শুভেচ্ছা। ওকে ধন্যবাদ জানাব আমাকে এখানে ডাকায়। চাই ক্লাব আরও অনেক সাফল্য পাক। ওর পাশে আছি। এতদিন অনেক খেলোয়াড় এই ক্লাবে সম্মানিত হয়েছেন খেলে। চাইব সেই ঐতিহ্য ও ধারা যেন বজায় থাকে।’ বিরোধী শিবিরের অন্যতম মুখ সৃঞ্জয় বসুর মতে, ‘আমরা লড়তে তৈরি। একটা সময় বারবার নানাভাবে সম্মানজনক প্রস্তাব দিয়েছিলাম নির্বাচনী লড়াই এড়ানোর। কিন্তু অঞ্জন মিত্র তা কানে তোলেননি। উল্টে চোর অপবাদ দিয়েছেন। অপমানিত হয়ে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর লড়াই ছাড়া কিছু ভাবছি না। ভোটে সদস্যরা যাঁদের জেতাবেন, তাঁরাই ক্লাবের ক্ষমতায় আসবেন।’