বিতর্ক যেন মোদী সরকারের মন্ত্রীদের পিছুই ছাড়ছেনা। ফের জনসমক্ষে মেজাজ হারিয়ে বিতর্কে জড়ালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। নিজের লোকসভা কেন্দ্র আসানসোলে প্রতিবন্ধীদের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রকাশ্যে এক ব্যক্তির সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা গেল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। অনুষ্ঠানটি ছিল বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য। সেই অনুষ্ঠানে গিয়েই এক ব্যক্তিকে অক্ষম করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বসলেন তিনি। অনুষ্ঠান চলাকালীন হঠাৎই এক জনকে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘ঠ্যাং ভেঙে হাতে ক্রাচ ধরিয়ে দেব।’ এই মন্তব্যের জেরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাবুল। অনুষ্ঠানের ভিডিয়োর ওই অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই আক্রমণের ঝড় উঠেছে।
মঙ্গলবার নিজের সংসদ এলাকা আসানসোলে ‘সামাজিক অধিকর্তা শিবির’ নামে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী বা বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য হুইল চেয়ার ও অন্যান্য সামগ্রী বিলির কর্মসূচি ছিল। অনুষ্ঠান মঞ্চে বাবুল যখন বক্তব্য রাখছেন, তখন দর্শকাসনের সামনে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হচ্ছিল। দর্শকদের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি বারবার চলাফেরা করছিলেন বলে অভিযোগ। ওই ব্যক্তির হাঁটাচলায় নাকি বক্তব্য রাখতে অসুবিধা হচ্ছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর। বক্তব্য চলাকালীন ওই ব্যক্তিকে একবার স্থির হয়ে দাঁড়ানোরও নির্দেশ দেন আসানসোলের সাংসদ। কিন্তু ওই ব্যক্তি মন্ত্রীর কথা না শুনে ফের হাঁটাচলা শুরু করেন। আর তাতেই মেজাজ হারান বিজেপির গায়ক সাংসদ। সরাসরি সেই ব্যক্তির উদ্দেশ্যে তিনি আঙুল উঁচিয়ে হিন্দিতে বলতে শুরু করেন, যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘আপনার কী হল ভাই? কোনও সমস্যা? আপনার একটা ঠ্যাং ভেঙে হাতে ক্রাচ ধরিয়ে দেব।’ এখানেই শেষ নয়, এরপরেও ওই ব্যক্তিকে দর্শকদের মধ্যে থেকে এক কোণে সরে আসতে বলেন। তারপর তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের তিনি ওই ব্যক্তির গতিবিধির উপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘ফের যদি উনি নড়াচড়া করেন, তাহলে মেরে ওঁর এক ঠ্যাং খোঁড়া করে হাতে লাঠি ধরিয়ে দেবেন।’ এরপর ওই ব্যক্তিকে ফের বলেন, ‘বুঝতে পেরেছেন?’
অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে শেষ হলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় বাবুলের সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। একটি বৈদুতিন সংবাদ মাধ্যম ওই ভিডিয়ো টুইট করার পরই নেটিজেনরা বাবুলকে তীব্র আক্রমণ শুরু করেন। বুধবার দুপুর পর্যন্ত হাজারখানেক রিটুইট হয়েছে ওই ভিডিয়োটি। অনেকেই বলেন, প্রতিবন্ধীদের অনুষ্ঠানমঞ্চে এমন মন্তব্য করে প্রতিবন্ধীদেরই অসম্মান করেছেন বাবুল। মন্তব্য ছাড়া প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন হাজারের কাছাকাছি মানুষ। তাতে বাবুলের দিকে ধেয়ে এসেছে কটাক্ষ, বিদ্রুপ, আক্রমণের বন্যা। এমনকি অনেকেই নিজেকে বিজেপি সমর্থক বলে দাবি করেও বাবুলের এই মন্তব্য সমর্থন করেননি। যদিও পরে বিজেপির গায়ক সাংসদ সাফাই দিয়েছেন, ‘পুরোটাই মজার ছলে কথা হচ্ছিল। তার একটা অংশ কেটে দেখানো হচ্ছে। এতে আমার কিছু বলার নেই।’
স্বাভাবিকভাবেই মন্ত্রীর এই আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিরোধীরা। তাছাড়া এই প্রথম নয়, বাবুলের মেজাজ হারানোর আরও নমুনা রয়েছে। এর আগেও প্রকাশ্যে বেফাঁস মন্তব্য করে শিরোনামে আসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এ বছর মার্চে আসানসোলে রামনবমী পরবর্তী গোষ্ঠী সংঘর্ষের পর এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন বাবুল। তখনই সমবেত জনতাকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া উচিত বলে বেফাঁস মন্তব্য করেছিলেন তিনি। এমনকি সেবারও মেজাজ হারিয়ে এক ব্যক্তির ‘চামড়া তুলে নেওয়া’-র হুমকি দিয়েছিলেন। তখনও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মন্ত্রী। ফের ঠ্যাং ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে নয়া বিতর্কে বিজেপির গায়ক সাংসদ। এভাবে বারবার বিতর্কিত মন্তব্য সাংসদের ভাবমূর্তির ক্ষতি করবে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।