অভিনয় ছিল জহরের রক্তে। সেই সময়ের অভিনেতাদের মতো মঞ্চ ঘুরে নয়, জহর অভিনয়ে এসেছিলেন সরাসরি। ফিল্মি বাড়িরই ছেলে তিনি। বাবা সতু রায় ছিলেন নির্বাক যুগের নামকরা অভিনেতা। কিন্তু তাতে জহরের বিশেষ সুবিধে হয়নি। তাঁর বাবা বরিশাল থেকে চলে আসেন কলকাতায়। শেষে চাকরি সূত্রে স্ত্রী আশালতাকে নিয়ে পটনায় গিয়ে থিতু হন। সেখানেই জহরের অনেকখানি বেড়ে ওঠা। প্রথম অ্যামেচার থিয়েটারে অভিনয়ও।
বিএ পড়ছিলেন বিএন কলেজে, সংসারের চাপে ফোর্থ ইয়ারে পড়া ছেড়ে ঢুকতে হল চাকরিতে। পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রুফ রিডার। পরে ইস্ট ইন্ডিয়া ফার্মাসিউটিক্যালসে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ। শেষমেশ তা-ও ছেড়ে দর্জির দোকান দিলেন। দিব্যি চলছিল। কারিগরের থেকে সেলাই মেশিন চালাতে, এমনকী শার্ট-প্যান্ট কাটতেও শিখে নিয়েছিলেন জহর।
‘কিন্তু সব গোলমাল করে দিলেন ওই চ্যাপলিন সাহেব’, বলছেন জহর- ‘এক দিন দোকান-টোকান তুলে দিয়ে কলকাতায় চলে এলাম।’ ট্যাঁকে কড়ি নেই। একটা বরযাত্রীর দলে ভিড়ে ট্রেনে চেপে চলে এলেন। খুঁটি বলতে পরিচালক অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়, জহরের ‘কালাচাঁদদা’। তিনিও তদানীন্তন বিহারের লোক, ভাগলপুরের।
তখন দেশভাগ হব-হব করছে। কলকাতা অশান্ত। অর্ধেন্দু ‘পূর্বরাগ’ করার তোড়জোড় করছেন। জহর হাজির। অর্ধেন্দু দেখে নিতে চাইলেন, ছেলেটা কতটা কী পারে। চ্যাপলিন হয়ে উঠে জহর শুরু করে দিলেন ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’। মিলে গেল রোল। তবে ‘পূ্র্বরাগ’ নয়, সম্ভবত সুশীল মজুমদারের ‘সাহারা’ ছবিতে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান জহর। এর পর বিমল রায়ের ‘অঞ্জনগড়’।
তারপর একে একে ‘ধন্যিমেয়ে’, ‘ছদ্মবেশী’, ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্টেন্ট’, ‘পরশপাথর’ –এর মত ছবিতে নিজের চরিত্রকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলেন জহর। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ছবিতেও নজর কাড়ে তাঁর অভিনয় । গুপী গাইন বাঘা বাইন-এ ষড়যন্ত্র প্রদানকারী মন্ত্রীর চরিত্রেও তিনি অনবদ্য ।
তবে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর জুটি বেঁধে অভিনয় আজও যে কোন মনখারাপের মুহুর্তে মানুষের মুখে হাসি এনে দিতে পারে ।বলা যেতে পারে তাঁদের এই জুটি উত্তম-সুচিত্রার জুটির মতই নজরকাড়া।বাংলা চলচ্চিত্রের এই বিশেষ সম্পদ ১৯৭৭ সালের ১১ই আগষ্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর সঙ্গেই সমাপ্তি ঘটে এক মহান প্রতিভার।