রাফাল চুক্তি নিয়ে আরও এক ধাপ সুর চড়াল কংগ্রেস। প্রাক্তণ প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্টনি তোপ দাগলেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। তাঁর প্রশ্ন, রাফাল সস্তা হলে, এত কম কেনা হল কেন?
কয়েকদিন আগেই বিজেপির তথ্য-প্রযুক্তি মোর্চার প্রধান অমিত মালব্য একটি টুইট পোস্ট করে জানান, ইউপিএ আমলে প্রতিটি রাফাল বিমানের দাম ছিল ৭৩৭ কোটি টাকা। আর এনডিএ আমলে বিমান প্রতি পড়ছে ৬৭০ কোটি টাকা। আনুষঙ্গিক অস্ত্রশস্ত্র মিলিয়ে ইউপিএ আমলে প্রতি রাফালের দাম ছিল ২০০০ কোটি টাকা। এনডিএ আমলে সেটি ১৬০০ কোটি টাকা। এখানেও প্রতি বিমানে সঞ্চয় ৪০০ কোটি টাকা।
অমিতের এই বক্তব্যকেই হাতিয়ার করে তোপ দেগেছেন একে অ্যান্টনি। তাঁর প্রশ্ন, ইউপিএ আমলের তুলনায় যদি সত্যিই এত সস্তায় চুক্তি হয়ে থাকে তাহলে বায়ুসেনার দাবি মতো ১২৬টির পরিবর্তে ৩৬ টি বিমানের জন্য চুক্তি করা হল কেন? অ্যান্টনির কথায়, আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ রাফাল চুক্তিকে ইউপিএ আমলের তুলনায় ৯ শতাংশ সস্তা বলেছেন। অর্থমন্ত্রী বলছেন ২০ শতাংশ সস্তা। এতই যখন সস্তা তাহলে ১২৬ টি বিমান কেনা হল না কেন?
আরও প্রশ্ন, হঠাৎ হ্যাল কেন বাদ? এরও উত্তর মিলছে না। ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে সবচেয়ে কঠিন কাজ বিমান তৈরি। আর অনিল আম্বানির কোম্পানির ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। আর্থিক ভিতও খুবই নড়বড়ে। সেই ভুঁইফোঁড় কোম্পানিকে এই চুক্তিতে নেওয়া আর ক্লাস ওয়ানের ছাত্রকে পিএইচডি-র থিসিস লিখতে দেওয়া একই ব্যাপার। মোট চুক্তির মধ্যে অর্ধেক, নিদেনপক্ষে ২৭ হাজার কোটি ওই কোম্পানি পাবে, তারা নাকি ছোট মাপের একজিকিউটিভ জেটের যন্ত্রাংশ তৈরি করবে। অথচ অফসেট গাইডলাইন বলছে, এ ধরনের যে কোনও চুক্তিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অনুমোদন লাগবে। আর মোদি সরকার এখন বলছে, ড্যাসল্ট আম্বানির সঙ্গে চুক্তি করলে আমাদের কী বলার থাকতে পারে! ১২৬টি বিমান কেন কেনা হল না? মনোহর পারিক্কর তখন বলেছিলেন, সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ হাজার কোটি খরচ পড়ে যাবে, দামটা খুবই বেশি। কিন্তু ঘটনা এই যে, প্রতিটি বিমানে ৭১৫ কোটি খরচ হচ্ছিল, তবে দেশে কারখানা তৈরির খরচ পড়ত আলাদা। এবার ড্যাসল্ট কোম্পানির প্রেস রিলিজের ৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় দেওয়া হিসেবে, ৩৬টি রাফালের দাম পড়ছে ৬৫ হাজার কোটি, প্রায় ১৭০০ কোটি। সস্তা হল? কী পারিক্কর?
এবার দেখা যাক নিরাপত্তার দিকটা। ভারতীয় বায়ুসেনা ১০ বছর আগে স্পষ্ট জানিয়েছিল, আমাদের অন্তত ৪২টি স্কোয়াড্রন চাই। বিমান হাতে না থাকলে নেমে আসবে ২০-তে। সেখানে ৩৬টি বিমানে কাজ চলে যাবে? প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার নিয়মে এখন নতুন টেন্ডার দিতে হবে। কারণ, সব কোম্পানির সমান সুযোগ প্রাপ্য। এবার ৩ বছর ধরে রাফাল বিমান সব রকমভাবে পরীক্ষা করেই বায়ুসেনা ছাড়পত্র দিয়েছিল। তিনটি বিমানও ড্যাসল্ট দিয়েছিল। এবার সেই প্রক্রিয়া কেঁচে গণ্ডুষ করতে হবে। অন্তত ৫টি বছর লেগে যাবে। ততদিনে দেশরক্ষার সরঞ্জাম থাকবে তো?