মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম হল ‘বাসস্থান’-এর অধিকার। তাই সকলের মাথার উপরে ছাদ থাকুক, এটাই চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই লক্ষ্যপূরণের উদ্দেশ্যেই এবার সকলের জন্য ‘নিজশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছেন মমতা। গোটা রাজ্যজুড়েই এই প্রকল্পের কাজ হবে। সূত্র থেকে পাওয়া খবর, এর জন্য এখনও পর্যন্ত জেলা শহরগুলিতে ১২টি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি ওই জায়গাগুলি চিহ্নিত করেছে। চিহ্নিত করা জায়গাগুলি হল দুর্গাপুর, আসানসোল, শিলিগুড়ি-ডাবগ্রাম, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, হলদিয়া, অশোকনগর প্রভৃতি।
সরকারি জমিতেই ‘নিজশ্রী’ প্রকল্পের কাজ হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, সেখানেই সরকারের তরফে ওয়ান বিএইচকে এবং টু বিএইচকে ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নিয়েই এই প্রকল্পের কাজ হবে। প্রতিটি জেলার জেলাশাসককে মাথায় রেখে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এই কমিটি এই প্রকল্পের সব কিছু দেখভাল করবে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁদের মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকার মধ্যে তাঁরা ওয়ান বিএইচকে ফ্ল্যাট পাবেন। দাম ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এর মাপ হবে ৪০০ বর্গফুটের কিছু বেশি। যাঁদের আয় মাসে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে, তাঁরা টু বিএইচকে ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যার দাম ৯ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা। এই ফ্ল্যাটের পরিমাপ ৫০০ বর্গফুটের কিছু বেশি। ১২টি জায়গায় যে জমিগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মাপ হল ১৫ কাঠা, ২০ কাঠা, ৩০ কাঠা এবং ৪০ কাঠা। প্রতিটি বাড়িই হবে চারতলা। প্রতিটি বহুতলে থাকবে ১৬, ৩২ এবং ৬৪টি করে ফ্ল্যাট। বহুতল তৈরি করার জন্য টেন্ডার ডাকতে জেলাশাসকদের ‘গো অ্যাহেড’ নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বাসস্থানের সুবিধার্থেই এই প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। জেলা সদর, মহকুমা শহরকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। বর্তমানে ১২টি শহরে এই আবাসন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেসব জমি চিহ্নিত করা হয়ে গিয়েছে, ইতিমধ্যে সেই সব জমির পজিশনও নিয়েছে রাজ্যের আবাসন দফতর। প্রকল্পের ব্যাপ্তি বাড়ানোর জন্য রাজ্যজুড়ে আরও জমি খোঁজার কাজ চলছে। সেই জমি পেলেই তা খতিয়ে দেখে বিল্ডিং তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে সেই জমি যেন সরকারি কোনও দফতরের অধীনেই থাকে, তার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে।
‘নিজশ্রী’ প্রকল্পে ফ্ল্যাটের জন্য আয়ের মাপকাঠি মেনেই আবেদন করতে হবে। তবে আবেদনের সংখ্যা বেশি হলে লটারি করা হবে। যাঁর ভাগ্যে উঠবে, তিনি পাবেন। ফ্ল্যাট বণ্টনে যাতে কোনও স্বজনপোষণ বা দুর্নীতির অভিযোগ না ওঠে, তার জন্য স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আবাসন দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘নিজশ্রী’ প্রকল্পের আওতায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সরকারি তরফে সাহায্য করা হবে বলে জানা গেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই দ্রুত গতিতে ‘নিজশ্রী’-র কাজ শেষ করতে বদ্ধপরিকর প্রশাসন।